বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় গাছ ভেঙে, ঘর ধসে এবং সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে ভোলার তজুমদ্দিন, পটুয়াখালীর দশমিনায় ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও ষোলশহর, বাঁশখালী, নোয়াখালীর হাতিয়া এবং কক্সবাজারে মোট ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক লোক।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূল অতিক্রম করার আগেই উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ভোলায় ২ জন
বাংলদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ পরিচালক মো. শাহাবুদ্দবীন জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়।
এরা হলেন- তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
শাহাবুদ্দবীন বলেন, ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘর চাপা পড়ে আকরাম আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৬টায় তার মৃত্যু হয়। এছাড়া ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে মারা যান রেখা বেগম।
স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ে তজুমদ্দিনের শশীগঞ্জ বাজারের তিন শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালীতে ১
এদিকে সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, নিহত ওই নারীর নাম নয়া বিবি, বয়স ৫২।
ঝড়ে ওই এলাকার আরো ১০-১২টি ঘর ধসে পড়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
চট্টগ্রামে ৮
এছাড়াও, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছলিমপুরে ঝড়ে গাছের চাপায় ঘরের চাল ভেঙে মা-ছেলে ও ষোলশহরে এক পথশিশু নিহত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের মধ্যে শনিবার সকালে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
নিহত মায়ের নাম কাজল বেগম (৪৮)। ছেলের নাম মো. বেলাল হোসেন (১০)। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধারে ঘটনাস্থলে কেউ যায়নি।
চট্টগ্রামের ষোলশহরে এক পথশিশুর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাসার ছাদ থেকে আসা ইঁটের আঘাতে রাকিব (১১) নামে ওই শিশু গুরুতর আহত হয়।
তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক জাহাঙ্গীর আলম।
বাঁশখালী উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে খানখানাবাদ ইউনিয়নে ৪ জন এবং ছনুয়া ইউনিয়নে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেন।
তিনি জানিয়েছেন, রোয়ানু আঘাত হানার পর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানি ঢুকে গেছে খানখানাবাদ ও ছনুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরে ঘরে পানি ঢুকে গেছে। জোয়ারের পানিতে গবাদি পশু, আসবাবপত্র ভেসে গেছে।
ওসি জানান, জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে খানখানাবাদ ইউনিয়নে দুটি বাচ্চা, এক নারী ও এক বৃদ্ধসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে তারা একই পরিবারের নন বলে ওসি জানান।
এছাড়া ছনুয়া ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে ভেসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
নোয়াখালীতে ৩
এদিকে, রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে নোয়াখালীর হাতিয়া থানার নলের চর এলাকায় এক মা ও শিশু কন্যার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছন ওসি এটিএম আরিসুল হক।
এছাড়াও জাহাজমারা ইউনিয়নের মাহফুজা বেগমের মৃত্যু হয়েছে (৪৫)।
হাতিয়া থানার ওসি আরিসুল হক জানান, নিহত মায়ের নাম মিনারা বেগম এবং শিশু কন্যার নাম মরিয়ম নেছা (৬)। নিহত মিনারা বেগমের স্বামীর নাম আবুল কাসেম। তিনি হাতিয়া থানাধীন হরনি ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা।
কক্সবাজারে ২ জন
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু সার্বিকভাবে কক্সবাজারের তেমন বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। তবে এর কারণে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১০ জন। হতাহত সকলেই কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
শনিবার বিকেল ৩ টার দিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
নিহতরা হলেন, কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)।
এর মধ্যে মো. ইকবাল বাড়ির দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল হক নৌকায় বসা থাকা অবস্থায় অপর একটি নৌকার ধাক্কায় আহত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন বলে নিশ্চিত করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন এই সময় জানান, আহতদের মধ্যে ৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। আহত ৫ জন বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। অপর ২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে ।
এসময় জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফ উপজেলার সাড়ে ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাধ আংশিক এবং সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে গেছে। শতাধিক বসত ঘর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পূর্বাসাভ প্রচারের পর জেলার ১৫৮ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৪৩৪ পরিবারের ৮৭ হাজার ১৭০ জন মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করে। একই সঙ্গে জেলার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।
লক্ষ্মীপুরে ১
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর তেওয়ারীগঞ্জ এলাকায় গাছ পড়ে আনার উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, তেওয়ারীগঞ্জ বাজার এলাকায় ঝড়ের সময় একটি গাছ চাপা পড়ে আহত হন আনার উল্যাহ। পরে লক্ষ্মীপুরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আনার উল্যাহ গাছ চাপা পড়ে মারা যান।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় রাজধানী ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাতেই বৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএস