উপকূলের জীবন-জীবিকা সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, উপকূলের বহু জনপদ আজও অবহেলিত। এরপর দুর্যোগের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে উপকূলের জন্য বিশেষ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আজ সোমবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘সুশীলন’-এর ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময়সভা থেকে এ আহ্বান জানান।
সুশীলনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ জ ম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভাটি সঞ্চালনা করেন সুশীলনের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বক্তৃতা করেন ঢাকা থেকে নিখিল ভদ্র ও সাকিলা পারভীন, খুলনা থেকে গৌরাঙ্গ নন্দী, কক্সবাজার থেকে মো. মুজিবুল ইসলাম, সাতক্ষীরা থেকে কল্যাণ ব্যানার্জি, আবুল কালাম আজাদ, এম কামরুজ্জামান ও শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, বাগেরহাট থেকে নাকির সিরাজুল হক, বাবুল সরদার ও আজাদুল হক, বরগুনা থেকে চিত্তরঞ্জন শীল ও জাকির হোসেন সিরাজ, পটুয়াখালী থেকে জালাল আহমেদ প্রমুখ।
সূচনা বক্তব্যে সুশীলনের দীর্ঘ সংগ্রাম ও অর্জন তুলে ধরেন মোস্তফা নূরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সুশীলন’ ১৯৯১ সাল থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। ‘প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করি, নবচেতনায় সমাজ বিনির্মাণে অবদান রাখি’- এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ৩০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এই কাজ শুরু হলেও সবার পিছে ও সবার নিচে পড়ে থাকা মানুষের উন্নয়নে সারা দেশে এখন সুশীলনের প্রায় ২০০০ কর্মী কর্মরত আছে।
গত ৩০ বছরে দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সুশীলন। গত ২০১৭ সাল থেকে সুশীলন রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং হোস্ট কমিউনিটির মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংগঠনটি ৬৪টি জেলায় ১৩১টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় ৩৯৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি পরিবারকে সহযোগিতা করেছে। যার মধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে দুর্যোগকালীন সহযোগিতা দিয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে সুশীলন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও বাঙালি সংস্কৃতির বিস্তারের সুশীলন জন্মলগ্ন থেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক প্রতিনিধিরা প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সুশীলনের মতো অন্যান্য সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারা দেশে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে, তা থেকে উপকূলীয় এলাকা অনেকটা বঞ্চিত। এরপর প্রতিনিয়ত ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ জীবন-জীবিকাকে চরম সংকটের মুখে ফেলেছে। এই সংকট মোকাবেলায় সরকার ও দাতাসংস্থাগুলোর দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নতুন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন।
সভায় উপকূলীয় অঞ্চলে সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা বলেন, উপকূলীয় ইস্যুগুলোকে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে আনতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ জন্য তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। উপকূলের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করতে অ্যাওয়ার্ড চালুর প্রস্তাব করেন তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ