বাংলা৭১নিউজ,(চাঁদপুর)প্রতিনিধিঃ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ শেষ। এখন অপেক্ষা নতুন ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের। কিন্তু সেই সুযোগ আর পেলেন না শিক্ষকরা। উদ্বোধনের আগেই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে নবনির্মত বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার ভবনটি। এতে করে বিদ্যালয়ের নির্মাণ খরচ ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা জলে ভেসে গেল।
চাঁদপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলে মেঘনা নদীতীরে রাজরাজেশ্বর ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারটি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, কয়েকদিন ধরে মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে নবনির্মিত বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারটি হুমকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে নবনির্মিত ভবনটি।
তাছাড়া গত কয়েক দিনের ভাঙনে দুই শতাধিক বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে আরও প্রায় ৫শ’ বাড়িঘর ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
গত ১০ দিনের ভাঙনে ইতিমধ্যেই ইউনিয়নের রাজারচর, খাসকান্দি, জাহাজমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
চেয়ারম্যান জানান, হঠাৎ করে শুক্রবার নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে তিন তলা বিশিষ্ট নব-নির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টারটি। মাত্র ২ মাস আগে দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভাঙনের শিকার ওমর আলী স্কুল কাম সাইক্লোন সেন্টারের ঠিকাদার প্রতিনিধি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ গাজী রনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় ৭/৮ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। যার ফলে এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউনিয়নবাসীর কথা চিন্তা করে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বিশিষ্ট বিদ্যালয় ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করা হয়।
গত একমাস আগে কাজ সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়।
তিনি জানান, নবনির্মিত ভবনটিতে বিদ্যালয়ের ক্লাস চালানোর পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ফণীর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল।
ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ জানান, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪৮৫ জন শিক্ষার্থী এবং ১১ জন শিক্ষক রয়েছে। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে থাকায় হুমকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের সাইড সিলেকশনের সময় নদী প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল। হঠাৎ করেই এ বছর এইদিকে ভাঙন বেশি হয়ে বিদ্যালয়টি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে রয়েছে।
তাছাড়া এই বিদ্যালয়টি এর আগেও একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এখানে ভাসমান বিদ্যালয় করা ছাড়া ভবন টিকিয়ে রাখা যাবে না।
নদী ভাঙনের শিকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. খালেক ও জয়নাল জানান, জোয়ার শেষে ভাটার সময়টাতেই ভাঙন শুরু হয়।
তবে গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারই ভাঙনের ভয়াবহতা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কারণ, এ বছর পাশের জেলা শরীয়তপুরের নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ এলাকায় মেঘনার ভাঙনরোধে যে বাঁধ দেয়া হয়েছে তার পানি প্রবাহের মুখটি দেয়া হয়েছে রাজরাজেশ্বরের দিকে। এর ফলে ওই জেলার দেয়া বাঁধের ধাক্কা খাওয়া স্রোত ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখানকার পাড়ে আঘাত হানছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আমরা কোনো ত্রাণ চাই না। আমরা চাই, আমাদের ভিটেমাটি রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, মেঘনা পানি ও স্রোতধারা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই এলাকাটি খুবই ভাঙনপ্রবণ। পদ্মা-মেঘনার মতো দুটি বড় নদী ভাঙছে। আমরা ওই এলাকার ভাঙন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বাংলা৭১নিউজ/এফএ