মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দেশের শিল্পোন্নয়নে বিটাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে: শিল্পমন্ত্রী উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে: ওবায়দুল কাদের এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৯ বাড়িওয়ালাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা শেরপুরে আগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র, ভাঙনে দিশেহারা নদীতীরের মানুষ দুই ঘণ্টার কোটা আন্দোলনে স্থবির ঢাকা বাংলাদেশ-ইইউর ৩ মি‌লিয়ন ইউরোর ঋণ সহায়তা চু‌ক্তি স্বাক্ষর কুমিল্লা আদালতে মামুনুল হক-খালেদ সাইফুল্লাহ প্রতিমন্ত্রী সিমিনের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ বিকাশ অ্যাপে প্রথমবার বিল পরিশোধে ৯০০ টাকা পর্যন্ত ডিসকাউন্ট কুপন জরিমানা পরিশোধ করলেই গাড়ির কাগজ পৌঁছে যাবে ডাক বিভাগে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে জবি শিক্ষার্থীদের অবরোধ চীনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার নিয়ে আ স ম রবের পাঁচ দফা একযোগে র‌্যাবের চার ব্যাটালিয়নসহ পাঁচ পরিচালককে বদলি কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ইন্ধন নেই, সমর্থন আছে: ফখরুল চুপিসারে ফেরেশতাদের কথা শুনে যা করতো জিনেরা ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় মামলা, আওয়ামী লীগ নেতা আটক বেনজীরের গুলশানের ৪টি ফ্ল্যাট পরিদর্শনে দুদক টিম সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যানচলাচল বন্ধ পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে যা জানা গেলো

ই-কমার্সে নারীর সাফল্য

মো. লুৎফর রহমান
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০২০
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

জীবন বন্দি হুইলচেয়ারে। ঘুমভাঙা থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জান্নাতুল ফেরদৌস মহুয়া বন্দি হুইলচেয়ারে। দাঁড়াতেও পারেন না একা। দৈনন্দিন কাজগুলো করে দেন মা সাহেরা খানম। তবে হুইলচেয়ারে বসেই বুনছেন নিজের স্বপ্ন। মহুয়া জামায় সুঁই-সুতা দিয়ে নকশা করেন। কারিকরদের কাজ বুঝিয়ে দেন। মাত্র দুই মাসেই ঘরে বসে অনলাইনে দেশীয় পণ্য দিয়ে তৈরি করা থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন পোশাক বানিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ৩০ জন কারিকর দিয়ে তৈরি করাচ্ছেন পণ্য।

পাবনার মেয়ে মহুয়ার বাবা মারা গেছেন ২০১৯ সালে। বাবা, দুই ভাই আর মায়ের সহায়তায় মহুয়া হুইলচেয়ারে বসেই ইংরেজিতে মাস্টার্স করছেন। অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমেই তার তৈরি পণ্য লন্ডন, ইতালি, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করানোর স্বপ্ন দেখছেন।

কুমিল্লার সীমান্তবর্তী গ্রামের মেয়ে জান্নাতুল মুক্তা। অনার্সপড়ুয়া জান্নাতুল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘খাদি রানি’ হিসেবে। কোভিড-১৯ মহামারিকালীন সংকটের মধ্যেও এ পর্যন্ত অনলাইনে পাঁচ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। রমজানের ইদে খাদি কাপড় দিয়ে বানানো অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বিক্রি করেছেন ১০০টি পাঞ্জাবি।

জান্নাতুল মুক্তা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে, তখন বাবা মারা যান। চার ভাই ও তিন বোনের বিশাল সংসারে সংগ্রাম করেই বড়ো হতে হয়েছে জান্নাতুলকে, ‘আগে নিজের খরচ চালানোই কঠিন ছিল। এখন নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটো ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারছি। করোনার সময় জরুরি প্রয়োজনে ভাইকে এক লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা করতে পেরেছি। মায়ের জন্য এক সপ্তাহেই পছন্দমতো ১০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছি।’

জান্নাতুল মুক্তা জানালেন, অন্য নারী উদ্যোক্তারাই তার খাদি গজ কাপড়ের ক্রেতা। ঢাকা বা অন্য জায়গায় বসেই তারা হাতে পাচ্ছেন কুমিল্লার এ কাপড়। তারপর তারা ওই কাপড় দিয়েই অন্য পণ্য বানিয়ে বিক্রি করছেন।

কাকলী রাসেল তালুকদার। দুই বছর বয়সের সন্তানের কথা চিন্তা করে চাকরি ছেড়ে দেন। তবে যে কোনো প্রয়োজনে স্বামীর কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেওয়ার বিষয়টিও ঠিক মানতে পারছিলেন না। সাত বছর ধরে জামদানি শাড়ি নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন। এক বছর ধরে জামদানি নিয়েই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন কাকলী। সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকার জামদানিও বিক্রি করেছেন ঘরে বসেই। করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্যেও রাজধানীতে ইদুল ফিতরে ছয় লাখ টাকার জামদানি বিক্রি করেছেন। আর বছর হিসাবে তা ১৪ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন এই উদ্যোক্তা।

একবিংশ শতাব্দীর নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাধা পেরিয়ে নারীরা সমাজে মর্যাদার স্থানে প্রতিষ্ঠিত হতে সর্বদা সচেষ্ট। তবে এজন্য নারীদের স্বাবলম্বী হতে হবে, হতে হবে আত্মনির্ভরশীল। আর স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। বর্তমান বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের অনেক নারী আজ তাঁদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীল কর্মের সর্বোত্তম প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

আশার কথা হলো মহুয়া, জান্নাতুল মুক্তা ও কাকলী রাসেলের মতো অনেক নারীই এখন নিজে কিছু করার প্রেরণা থেকে কখনো এককভাবে, কখনো দলবদ্ধ হয়ে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে অনলাইন ব্যবসা করছেন, যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুগোপযোগী এবং বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে।

এমনই এক অনলাইন প্ল্যাটফরম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)’-এর সঙ্গে যুক্ত মহুয়া, জান্নাতুল মুক্তা ও কাকলী রাসেল। এটি এখন দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফরম। ২০১৭ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করা এ ফোরাম দেশের ৬৪ জেলার ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের অন্যতম ভরসার প্ল্যাটফরম। অনলাইন প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয় লাখ। এছাড়া প্ল্যাটফরমটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নতুন উদ্যোক্তার সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অনলাইনে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, পণ্য বিক্রির কৌশল শেখানোসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্ল্যাটফরমটিতে ৮০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ‘উই’তে সদস্য হিসেবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্রেতাও আছেন। জান্নাতুল ফেরদৌস, জান্নাতুল মুক্তা ও কাকলীর গল্পগুলো অন্য নারীদের উৎসাহিত করছে।

করোনাভাইরাস বিস্তারের পর গত কয়েক মাসে ব্যবসা করে ‘লাখপতি’ হওয়া উদ্যোক্তাদের একটি তালিকা করেছে উই। তালিকায় প্রায় ১০০ জন নারী উদ্যোক্তা আছেন। দিন দিন এ তালিকা বড়ো হচ্ছে। লাখপতির খেতাব পাওয়া প্রথম নামটাই কাকলী রাসেল তালুকদারের। কাকলী বর্তমানে উইতে অন্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। করপোরেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ভয়াবহ এ মহামারি প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তিপর্যায়ে। চাকরির বাজারে এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা অনেক ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান করোনা সংকট-পরবর্তী অনিশ্চিত সময়ের কথা বিবেচনা করে ব্যয় সংকোচনের দিকে ঝুঁকছে। এরই অংশ হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছে। সারা বিশ্বেই বাড়ছে বেকারত্ব।

বৈশ্বিক মহামারির নতুন স্বাভাবিকতা মেনে নিয়ে ভবিষ্যতে কী করা যায়, তা কমবেশি সবাইকে ভাবাচ্ছে। অনেকে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মেধা, প্রশিক্ষণ ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের সফল অনলাইন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান বিশ্ব ও মানব সম্প্রদায় আজ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত। কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং কর্মযজ্ঞে স্থবিরতা বিরাজ করছে। অদ্যাবধি এই রোগের কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং ঘরবদ্ধ (লকডাউন) থাকাই নিজেকে রক্ষার অন্যতম উপায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এই লকডাউন মানুষের; বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের নানাবিধ মানসিক সমস্যা তৈরির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি কর্মহীনতার জন্য পরিবারের আর্থিক উপার্জন কমে যাচ্ছে। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে, করোনার তৈরি হুমকি থেকে কর্মের নতুন সুযোগ খুঁজতে হবে। লকডাউনের সময়টা কাজে লাগিয়ে ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা নিজেদের শিক্ষা, প্রতিভা ও মননশীলতা কাজে লাগিয়ে একেকজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। চলমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারি কাটিয়ে উঠতেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আর্থিক ক্ষতি কাটাতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্যও রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদানেরও নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ৩ বছরের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার আবর্তনশীল (revolving) পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিতরণকৃত ঋণের সর্বোচ্চ ৫০% ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৪% সুদে পুনঃঅর্থায়ন করবে। এ তহবিল গঠনের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল সরবরাহ নিশ্চিত হবে এবং উদ্যোক্তারা সহজেই ঋণ পাবেন বলে আশা করা যায়। ২৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নোভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সিএমএসএমই (ঈগঝগঊ) খাতের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ-২ অনুসারে সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনাকারী ব্যাংকের শাখায় অথবা নিকটস্থ যে কোনো ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ৩১ মে সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, দপ্তর-সংস্থার প্রধান ও প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে আয়োজিত এক সভায় নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আর্থিক এবং টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা দেন।

এ সময় তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ করোনাকালীনও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। পহেলা বৈশাখ ও ইদে নারী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা পোশাক এবং তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রি করতে পারেননি। তাই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে হবে। অনলাইনে এসব পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য তাদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে শিল্প সচিব কেএম আলী আজম বলেন, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে বাদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারীবান্ধব ব্যবসার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে সরকার। দেশের নারী উদ্যোক্তাদের করোনাভাইরাস-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে ই-কমার্স সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জুম অনলাইনে উই-এর সদস্য নারীদের জন্য ‘এন্ট্রাপ্রেনারশিপ মাস্টারক্লাস সিরিজ’ শীর্ষক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম জানান, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফরম ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) ফোরামের নারী সদস্যদের বিশ্বখ্যাত ‘এন্ট্রাপ্রেনারশিপ মাস্টারক্লাস ১.০’ সিরিজের আওতায় প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করবে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ১০ বছর আগেও শতকরা ৪৩ ভাগ অভিভাবক তাদের মেয়ে সন্তানদের উদ্যোক্তা হওয়ার পক্ষে মত দিতেন না। কিন্তু সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, নারীরা এখন উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। উইয়ের প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার (নিশা) বলেন, ‘উই দেশীয় পণ্যের একটি প্ল্যাটফরম। বিভিন্ন অঞ্চলের বিখ্যাত জিনিস বা যে পণ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে, সেসব পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়েই ব্যবসা করছেন নারী উদ্যোক্তারা। একটা সময় ফেসবুক শুধুই একটা যোগাযোগমাধ্যম ছিল, যেখানে অনেক পুরোনো বন্ধু খুঁজে পাওয়া যেত। দেশের বাইরের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হতো। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্যোক্তাদের জন্য। ফেসবুকের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা পণ্য কেনাবেচা করতে পারছেন, যাকে আমরা এফ-কমার্স নামে জানি। এটি দেশীয় পণ্যের একমাত্র জায়গা, যেখানে আমরা হাজার হাজার নারী উদ্যোক্তাকে একত্র করতে পেরেছি। তারা তাদের পণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে নেটওয়ার্কিং, নানা বিষয়ে কর্মশালা ও ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ পর্যন্ত করতে পারছেন। এই একটিমাত্র প্ল্যাটফরমে থেকে অনেকেই তাদের হতাশা কাটিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের পরিকল্পনাও করছেন।’

উই বিষয়ে প্ল্যাটফরমটির উপদেষ্টা এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ছয় বছরে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি যে মানসম্মত লেখাপড়া এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। উইয়ের মাধ্যমে দেশি পণ্য দেশের পাশাপাশি প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। অনেক প্রবাসী এখন বাংলাদেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে উইয়ের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন নারীদের দেশ ও দেশের বাইরে পরিচিত করার নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফরম উইয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজ আছে। তবে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছেন এমন পুরুষদেরও প্ল্যাটফরমটিতে সক্রিয় উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য।

দেশে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) ছাড়াও বহু সংস্থা রয়েছে, যেখান থেকে যে কেউ একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে সার্বিক সহযোগিতা পেতে পারেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এমনই সহায়ক ১৪টি সংস্থার মধ্যে আইটি ও বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাতের চারটি সংস্থা হলোÑ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসিও), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড আইটি সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি (বিডব্লিউআইটি) এবং ই-কর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। নারী উদ্যোক্তাদের সহায়ক ৭টি সংস্থা হলো বাংলাদেশ ফেডারেশন অব উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস (বিএফডব্লিউই), চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিডব্লিউসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), কিশোরগঞ্জ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (কেডব্লিউসিসিআই), পটুয়াখালী উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (পিডব্লিউসিসিআই), এসএমই ফাউন্ডেশন (এসএমইএফ) এবং উইমেন এন্ট্রাপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউইএ)। বস্ত্র ও পোশাক খাতের তিন সংস্থাÑ বাংলাদেশ হ্যান্ডিক্রাফটস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাংলাক্রাফট), একতা ফেয়ার ট্রেড ফোরাম এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন অ্যান্ড প্রোমোশন সেন্টার (জেডিপিসি)।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সাফল্য অর্জনের জন্য ই-কমার্স সম্ভাবনার দ্বার হিসেবে কাজ করছে। সবার আন্তরিক সহযোগিতা পেলে অনলাইনে দেশি পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিক্রি অনেক বাড়বে আশা করা যায়। যেখানে উদ্যোক্তা নারীরা অবদান রাখতে পারবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে।

লেখক: সম্পাদনা সহকারী, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com