দলের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি চেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। একইসঙ্গে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে দলটির পক্ষ থেকে ১৫ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি ভবনে খেলাফত মজলিস নেতাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়। সেখানেই মামুনুলের মুক্তির বিষয়টি সামনে আনেন খেলাফত নেতারা।
সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এতে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে খেলাফত নেতারা বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলো আমাদের সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ অনেক নেতা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। এ অবস্থায় দ্রুত তাদের মুক্তির জন্য কমিশনের সহযোগিতা কামনা করছি।
জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন একটি জাতীয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বলেও উল্লেখ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে খেলাফত নেতারা আরও বলেন, যেহেতু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দল ও প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের সব আচরণবিধি মানতে বাধ্য, ফলে কমিশনের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নাতীত হওয়া অপরিহার্য। কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রকার সংশয় ও সন্দেহ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা ১৫ দফার মধ্যে রয়েছে-
১. নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কমিশনকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
২. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দিন থেকে স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলির ক্ষমতা ইসির হাতে রাখা এবং নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের সাতদিন আগে থেকে নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করা।
৩. নির্বাচনে যেভাবে অর্থের প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের বিপথগামী ও চরিত্র নষ্ট করা হয়ে থাকে তাতে কোনো সৎ ও যোগ্য লোকের নির্বাচন করা খুবই কঠিন। এ অপতৎপরতা বন্ধ করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অতীতে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় উল্লেখযোগ্য কোনো সফলতা অর্জিত হয়নি। নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব চলছেই। এ ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব হলো, কমিশনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে সব প্রার্থীর পক্ষ থেকে সার্বিক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা। একই পোস্টারে সব প্রার্থীর পরিচয় ও প্রতীক এবং একই মঞ্চে সব প্রার্থীর বক্তৃতার ব্যবস্থা করা। জামানতের সঙ্গে এসব খরচের টাকা প্রার্থী বা দল থেকে নেওয়া যেতে পারে।
৪. নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।
৫. আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যে কোনো প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
৬. ধর্ম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিরোধী কোনো দলকে নিবন্ধন না দেওয়া।
৭. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিংবা বিরোধপূর্ণ কোনো আইন ও শর্ত আরোপ না করা।
৮. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে সংসদ ভেঙে দেওয়া।
৯. নির্বাচন চলাকালীন সময়ে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা নেওয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
১০. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার সব কারাবন্দিকে মুক্তি দেওয়া। নতুন কোনো রাজনৈতিক মামলা না দেওয়া। কোনো প্রার্থী ও তার কর্মীদের অযথা হয়রানি না করা।
১১. আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে করা।
১২. অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
১৩. নিরপেক্ষভাবে ভোটের সংবাদ প্রচারে/সরাসরি সম্প্রচারে মিডিয়ার ওপর কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি না করা।
১৪. প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামরার আওতায় আনা (সিল মারার স্থান ব্যতিত)।
১৫. প্রবাসী ভোটারদের ভোটগ্রহণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ