রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠালো বাংলাদেশ ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ১৩.৯ শতাংশ: অর্থমন্ত্রী সোনার দাম আরও বাড়লো ব্যর্থতা ঝেড়ে বিশ্বকাপ রঙিন করার প্রত্যাশা জ্যোতির পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য এবি ব্যাংক পিএলসি যশোরে স্মার্ট কার্ডে নারী উদ্যোক্তা ঋণ স্মরণে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আইওএম মহাপরিচালক অ্যামি পোপে তীব্র তাপপ্রবাহের পর হবিগঞ্জে ঝড়-শিলাবৃষ্টি গুচ্ছের বি ইউনিটের ফল প্রকাশ তাপপ্রবাহ এবারই শেষ নয়, প্রস্তুতি শুরুর পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাওরের প্রায় শতভাগ বোরো ধান কাটা শেষ ২৪ ঘণ্টায়ও নেভেনি সুন্দরবনের আগুন, সময় লাগবে ২-৩ দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ সরকারি সফরে অস্ট্রেলিয়া গেলেন বিমান বাহিনী প্রধান সরকার তৃণমূল মানুষের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে ক্র্যাবের মানববন্ধন উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করুন: রিজভী গ্যাস পাচ্ছেন গোপালগঞ্জবাসী অপারেশনের নামে হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ পেতেন মিল্টন সমাদ্দার আশ্রমকাণ্ডে দায় এড়াতে পারেন না মিল্টনের স্ত্রী

ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে আরবরা হারে কেন?

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
  • ১৭১৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে এক সময়ের আশ্রয়প্রার্থী ছিল ইহুদিরা। কালের পরিক্রমায় এখন ইহুদিদের রাষ্ট্র ‘ইসরাইল’ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। দেশটির রয়েছে সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী।

মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ ইসরাইল; যাদের হাতে রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। দেশটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত। ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল আর আরব দেশগুলির সাথে যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরাইল।

ইসরাইল বাহিনী

ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরের মধ্যে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭৮; এই ৩০ বছরে আরব দেশগুলোর সাথে ইসরাইল ৫ বার যুদ্ধে জড়ায়। ওইসব যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানী না ঘটলেও কখনো নাস্তানাবুদ হয়েছে ইসরাইল আবার কখনো আরব দেশ।

কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি যুদ্ধের চূড়ান্ত ফলাফলে বিজয়ী হয়েছে ইসরাইল। ফলে ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের প্রবল ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

কিন্তু আরব দেশগুলোর সেনাবাহিনী বেশ পুরতান এবং সুসজ্জিত হওয়ার পরেও একটি নতুন আনকোরা সামরিক বাহিনীর কাছে কেন পরাজিত হয়েছে তারা?

ইসরাইল-আরবের মধ্যে কেন বারবার যুদ্ধ হয়েছে? ওইসব যুদ্ধে কোন দেশের কী ভুমিকা ছিল? যুদ্ধে কারা কী লাভবান হয়েছে? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত…

প্রথম যুদ্ধ :ফিলিস্তিন দখল ইসরাইল প্রতিষ্ঠা

১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের উপনিবেশ ছিল ফিলিস্তিন। ব্রিটিশ শাসন বিলুপ্তির সময় জাতিসংঘ ফিলিস্তিনে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়। যার একটি মুসলিম রাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিন’ ও অন্যটি ইহুদি রাষ্ট্র ‘ইসরাইল’।

কিন্তু আরব দেশগুলো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার তীব্র বিরোধীতা করে।

আরব দেশগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও জাতিসংঘের প্রস্তাবনা অনুযায়ী এগোতে থাকে ইহুদি নেতারা।

ইসরাইলি সৈন্য_১৯৪৮

ফিলিস্তিন ছেড়ে ব্রিটিশদের চলে যাবার দিন ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইহুদি নেতারা ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে আরব দেশগুলো ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা বেমালুম ভুলে যায়!

প্রায় বছর ব্যাপী যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে হেরে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয় আরব দেশগুলো।

এই যুদ্ধে জেরুজালেমের পশ্চিম অংশ, গ্যালিলি, নেজেভসহ ফিলিস্তিনের শতকরা ৭৫ ভাগ দখল করে নেয় ইসরাইল।

এদিকে যুদ্ধের ফলে ইসরাইলের দখলে নেয়া এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিরা বিতাড়নের শিকার হয়।

ইসরাইল থেকে আসা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বন্য বয়ে যায় লেবানন, জর্ডান, সিরিয়া ও মিশরে।

এ সময়ে প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূমি হারিয়ে শরণার্থী হিসেবে অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছিল।

দ্বিতীয় যুদ্ধ : ইসরাইলের মিসর অভিযান, গাজা সিনাই দখল

১৯৪৯ সালে যুদ্ধবিরতি হলেও আরব দেশগুলো ইসরাইলের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে এবং সীমান্তে কড়া টহলের ব্যবস্থা করে। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি হলেও টানটান উত্তেজনা চলছিল।

অবরোধ মুক্ত হতে ১৯৫৫ সালে গাজায় মিশরের সামরিক স্থাপনায় হামলা করে ইসরাইল।

১৯৫৬ সালে সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তেরান প্রণালী বন্ধ করে দেয় মিশর।

আরব-ইসরাইল যুদ্ধ ১৯৫৬

প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সহায়তা মিশরে হামলা করে ইসরাইল। সুইজ খালের পূর্ব পাশের মিশরের সিনাই ও গাজা উপত্যকা দখল করে নেয় তারা।

এদিকে মিশরের মিত্রদেশ আমেরিকা প্রবল চাপ প্রয়োগ করে নিবৃত করে ইসরাইলকে। চাপে পড়ে মিশর থেকে সৈন্য সরিয়ে দেশে ফেরত আনে ইসরাইল।

অবশেষে জাতিসংঘে উত্থাপিত কানাডার প্রস্তাব মেনে নেয় শক্তিধর দেশগুলো। সুয়েজ খালের দেখভালের দায়িত্ব নেয় জাতিসংঘ।

তৃতীয় যুদ্ধ :ইসরাইলের সম্পূর্ণ ফিলিস্তিন দখল প্রবল শক্তি প্রদর্শণ

তৃতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ ‘ছয় দিনের যুদ্ধ’ নামেও পরিচিত। ১৯৬৭ সালে আবার তেরান প্রণালি বন্ধ করে দেয় মিশর। একই সময় ইসরাইলের দক্ষিণে সিনাই উপত্যকায় সৈন্য সমাবেশ করে।

এসময় সিরিয়া ও মিশর একত্রিত হয়ে ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক গঠন করেছিল।

আরব-ইসরাইল যুদ্ধ_১৯৬৭

ইসরাইল ৫ জুন একযোগে বিমান ও স্থল হামলা করে নাস্তানাবুদ করে ফেলে চারপাশের আরব রাষ্ট্রগুলোকে। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, মিশরের সিনাই এবং সিরিয়ার গোলান হাইট দখল করে নেয় ইসরাইল।

পশ্চিম তীর তখন জর্ডানের এবং গাজা উপত্যকা মিশরের শাসনে ছিল। বলা যেতে পারে, বৃটিশদের শাসন করা সমগ্র ফিলিস্তিন এই যুদ্ধের ফলে ইসরাইলের দখলে চলে আসে।

এই যুদ্ধে ইসরাইলকে অর্থ সহযোগিতা দেয় আমেরিকা। এছাড়া ইসরাইল ফ্রান্সের নিকট থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদের সাহায্য পেয়েছিল।

মাত্র ছয় দিনেই তিনটি দেশকে পরাজিত করে ইসরাইল তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে।

এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে ইসরাইল।

৪র্থ যুদ্ধ : কোনঠাসা ইসরাইলের প্রতিরোধে নাস্তানাবুদ সিরিয়া-মিসর

আরবদের কাছে এটা ‘অক্টোবর যুদ্ধ’ এবং ইসরাইলের কাছে ‘ইয়ম কিপুর যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত।

মিশর ও সিরিয়া যথাক্রমে ইসরাইলের দক্ষিণ ও উত্তর দিকে একযোগে হামলা করে। হামলার দিনটি ছিল ইসরাইলের ধর্মীয় উৎসব ‘ইয়ম কিপুর’ এর দিন।

সুয়েজ খাল অতিক্রম করছে মিশর সেনাবাহিনী

এই যুদ্ধে রাশিয়ার পরোক্ষ সহযোগিতায় মিশর ও সিরিয়া প্রথমে সিনাই উপত্যকা ও গোলান হাইটে ইসরাইলকে কোনঠাসা করে ফেলে।

উল্লেখ্য, ইসরাইল ১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে মিশরের সিনাই উপত্যকা ও গোলান হাইটের দখল নিয়েছিল।

তবে যুদ্ধে ইসরাইল দ্রুত ফিরে আসে। উল্টো আঘাত করে না্স্তানাবুদ করে ফেলে মিশর ও সিরিয়াকে।

মিশরের রাজধানী কায়রো এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে যায় ইসরাইল। বিপদ দেখে আরব দেশগুলোর তেল সংস্থা ওপেক পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

তেলের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি পায়।

এ অবস্থায় কুটনীতিক দৌড় ঝাঁপ শুরু করে আমেরিকা। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার প্রথমে মিশর-ইসরাইল এবং এরপর সিরিয়া-ইসরাইল এর মধ্যে সমঝোতা করান।

সমঝোতার জন্য এই তিন দেশে কয়েকবার করে সফর করেন তিনি। এজন্য কিসিঞ্জারের এই কুটনীতিক তৎপরতা ‘শাটল কুটনীতি’ নামে পরিচিত।

৫ম যুদ্ধ : ইসরাইলের লেবানন দখল ইয়াসির আরাফাতের স্বীকৃতি

১৯৭৮ সাল থেকে লেবানন সীমান্ত দিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গেরিলা হামলা করতে থাকে ইয়াসির আরাফাতের ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংস্থা (পিএলও)।

প্রতিক্রিয়ায় ১৯৮২ সালের ৬ জুন পুরোদমে লেবাননে অভিযান চালায় ইসরাইল। তাদের এই অপারেশনের নাম ছিল ‘পিস অফ গ্যালিলি’।

মাত্র ৮দিন পরেই ১৪ জুন লেবাননের রাজধানী বৈরুত ঘেরাও করে ফেলে ইসরাইল।

১৯৮২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বোমা নিক্ষেপ করছে ইসরাইলি সেনারা

এর কিছুদিন পর জাতিসংঘ নিশ্চিত করে যে, ইসরাইলের অস্তিত্ব ধারণের বৈধতা রয়েছে। অর্থাৎ ইসরাইল একটি বৈধ রাষ্ট্র।

একই সময়ে পিএলও লিডার ইয়াসির আরাফাতও ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন।

কিন্তু ওই সময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ হিসেবে পিএলওকে স্বীকৃতি দেয়নি আমেরিকা। ফিলিস্তিন এখনো জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য দেশের স্বীকৃতি পায়নি।

অবশেষে ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লেবানন থেকে ইসরাইল সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।

আন্তর্জাতিকভাবে ইহুদি রাষ্ট্রের ঘোষণা

উল্লেখ্য, ইহুদি রাষ্ট্রের কথা প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে উচ্চারিত হয় ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে ফিলিস্তিন।

১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থার বেলফোর ব্রিটিশ ইহুদি নেতা লর্ড রথচিল্ডের কাছে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।

স্মরণ করা যেতে পারে যে, ফিলিস্তিনে নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইহুদিদের স্বপ্ন ও চেষ্টা অনেক পুরানো।

১৮ শতকের শেষের দিকে সারা বিশ্ব থেকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে আসতে থাকে এবং সেখানে বসতি স্থাপন করে।

১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে আগত ইহুদিরা

তবে বেলফোর ঘোষণার সময়ও ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসংখ্যা ছিল মাত্র শতকরা ১৪ ভাগ।

১৯১৭ সালে অটোমান শাসনের পতনের পর থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আগমন ব্যাপক বেড়ে যায় এবং স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের সাথে তাদের প্রায়ই সংঘর্ষ হতে থাকে।

১৯৩৬ সালে আরব বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ রাজপরিবার সেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল দুই পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করে।

১৯৪৭ সালেও জাতিসংঘ একই প্রস্তাব উত্থাপন করে। তবে তা প্রত্যাখান করেছিল আরব দেশগুলো। সূত্র: এরাবিয়ান জার্নাল।

বাংলা৭১নিউজ/জেএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com