শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
দ্বাদশ সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীদের জন্য ৯৪০ প্রশ্ন ভরিতে আরও ১৮৭৮ টাকা কমলো সোনার দাম সব প্রার্থী আমাদের কাছে সমান: ইসি আলমগীর টোল আদায়ে দুর্নীতি, দুদকের হস্তক্ষেপে ইজারা বাতিল রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের পাশে আছে ইউরোপ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেই আ.লীগ ক্ষমতায় এসেছে : কাদের এপ্রিলে নির্যাতনের শিকার ১৯৩ নারী-শিশুকন্যা ৯ মে পর্যন্ত চলবে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ মৃত ব্যক্তিদের জাল সনদ: মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড গণমাধ্যম শুধু মুক্ত নয়, উন্মুক্ত : তথ্য প্রতিমন্ত্রী যাত্রীবাহী বাস থেকে ৭টি স্বর্ণের বারসহ চোরকারবারি আটক আমন মৌসুম থেকেই চাল ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ করা হবে : খাদ্যমন্ত্রী টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ১০ বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে শনিবার থেকে খোলা স্কুল-কলেজ: শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইসলামী ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা জমা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ১২ কেজি এলপিজির দাম কমলো ৪৯ টাকা শেয়ার ছাড়বে রূপালী ব্যাংক নীলফামারীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধার মৃত্যু

ইবনে সিনা ট্রাস্টের সাথে ইসলামী ব্যাংকের সকল সম্পর্ক ছিন্ন

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল ইবনে সিনা ট্রাস্টের। ব্যাংকটির মালিকানায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংযোগ হিসেবে ইবনে সিনা ট্রাস্টকেই মনে করা হতো। উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধিরা মূলত ব্যাংকটি পরিচালনা করেছেন। তাঁরা কখনো চেয়ারম্যান হিসেবে, কখনো ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন ব্যাংকটিতে।

ইসলামী ব্যাংক থেকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ছিন্ন করার অংশ হিসেবে গত মাসে ব্যাংকটির সব শেয়ার ছেড়ে দিতে হয় ইবনে সিনা ট্রাস্টকে। এর আগে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন হয়। তখন ইবনে সিনার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মুস্তাফা আনোয়ারকে পদ ছাড়তে হয়েছিল। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মান্নানকেও সরে যেতে হয়।

এই পরিবর্তনের পর বেসরকারি খাতে দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকটি মুনাফার শীর্ষস্থান থেকে ছিটকে পড়েছে। ধারাবাহিকভাবে কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি দেশের সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের পর সেই শীর্ষস্থান হারিয়েছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ৫৫০ কোটি টাকা। আর ইসলামী ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা ৪৬৯ কোটি টাকা।

এ বিষয় নিয়ে বক্তব্য জানতে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানই ২০১১ সাল পর্যন্ত একরকম নির্বিঘ্নে ব্যাংকটি পরিচালনা করে আসছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে পরিচালক হতে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা করা হলে দলটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বে ভাটা পড়ে। আর ২০১৭ সাল থেকে ২ শতাংশ করে শেয়ার কিনে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ।

বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও ইসলামী ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া মীর কাশেম আলী চার বছর ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ও ১২ বছর নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এর মধ্যে তিনি ১৯৮৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টারের প্রতিনিধি হিসেবে ও পরে ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি পরিচালক ছিলেন। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর ব্যক্তিমালিকানাধীন কেয়ারি লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসেবেও পর্ষদে অন্য পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের পক্ষেও ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। মীর কাশেম ছিলেন দিগন্ত মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী।

জামায়াত-সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন। ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চট্টগ্রামের একটি শিল্প গ্রুপ

  •   পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংকের ৮ কোটি ৬৯ লাখ শেয়ার বিক্রি করে অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)
  •  কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউস সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়
  • দেশের স্বল্পখ্যাত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এখন ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনে ব্যাংকটি পরিচালনা করছে, যার সবকটিই চট্টগ্রামের
  • পরিবর্তনের পর মুনাফার শীর্ষস্থান হারিয়েছে ইসলামী ব্যাংক

ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ২০১৩ সালে আবু নাসের মো. আবদুজ জাহের ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১৩ জুন ট্রাস্টের পক্ষে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন মুস্তাফা আনোয়ার। এ ছাড়া গত ৩৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে এ ট্রাস্টের পক্ষে সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান, নৌবাহিনীর সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা আতাউর রহমান, ব্যবসায়ী কাজী হারুন অর রশীদসহ অনেকেই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বে ছিলেন।

ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে দেশীয় জামায়াত-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হলো ইসলামী ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরো, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, বায়তুস শরিফ ফাউন্ডেশন। তবে বর্তমানে ব্যাংকটিতে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নগণ্য।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে পরিবর্তনের পরই ইবনে সিনা ট্রাস্টকে শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। গত ২৫ এপ্রিল ব্যাংকটির ২৬২তম পর্ষদ সভায় ট্রাস্টের পুরো শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার অনুমোদন হয়। ২৬ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এক ঘোষণায় ইসলামী ব্যাংক জানায়, ইবনে সিনা ট্রাস্ট নিজেদের হাতে থাকা ৩ কোটি ৬০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯১ শেয়ার ছেড়ে দেবে। ব্যাংকটির ২ দশমিক ২৪ শতাংশ শেয়ার ছিল ট্রাস্টের কাছে। সেদিনই এস আলম গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৯০ কোটি টাকা দিয়ে ওই শেয়ার কিনে নেয়। অন্য কেউ যাতে এ শেয়ার কিনতে না পারে, এ জন্য ব্লক মার্কেটে এসব শেয়ার কেনাবেচা হয়।

ব্যাংকটির তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যাংকটির বড় পরিবর্তনের সময় নতুন চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আরাস্তু খান। গত এপ্রিলে মোর্তজা অ্যাসেট লিমিটেড নামের নতুন একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটির ৫ কোটি ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮২ শেয়ার কেনে। গত ১৭ এপ্রিল ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান পদত্যাগ করলে নাজমুল আহসান নতুন চেয়ারম্যান হন। আরাস্তু খানকে মনোনয়ন দেওয়া আরমাডা স্পিনিং মিলের পক্ষেই নতুন পরিচালক হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তিনি। আর মোর্তজা অ্যাসেট লিমিটেডের পক্ষে এ দিনই পরিচালক নিযুক্ত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন। তিনি সরকারি খাতের হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনেরও চেয়ারম্যান।

ইবনে সিনা ট্রাস্ট কেন পুরো শেয়ার ছেড়ে দিল, তা জানতে ট্রাস্টের একাধিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এখনই কেউ এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন বলে তাঁরা জানান।

শেয়ার বিক্রি করছেন বিদেশিরাও

ইসলামী ব্যাংকে শুরু থেকেই বিদেশি মালিকানা ছিল।  ব্যাংকটির শুরুতে বিদেশিদের অংশ ছিল ৭০ শতাংশের মতো, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বড় এই পরিবর্তনের পর শেয়ার বিক্রি করে আইডিবি। আবার কুয়েতের সরকারি ব্যাংক কুয়েত ফাইন্যান্স হাউসও শেয়ার বিক্রি করে।

১৯৮৩ সালে গড়ে ওঠা ব্যাংকটিতে এখন সাড়ে ১৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। দেশের ব্যাংক খাতের বাজার অংশের প্রায় ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে ব্যাংকটি। এখনো প্রবাসী আয় সংগ্রহে তারা রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে, বৈদেশিক বাণিজ্যেও রয়েছে বড় অবদান।

সাবেক ব্যাংকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের গতিবিধির খোঁজ রাখেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।  তিনি বলেন, ইবনে সিনার মাধ্যমেই জামায়াত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইসলামী ব্যাংক চালাতেন। তাঁরা শেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় দৃশ্যত ব্যাংকটির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কাটা পড়ল। তবে জামায়াত চালালেও এটি দেশের শীর্ষ ব্যাংক ছিল। মালিকানা পরিবর্তনের পর তাতে ব্যাঘাত ঘটলে এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এ জন্য নিবিড় তদারকির মধ্যে রাখতে হবে। যাতে আর্থিক অবস্থার কোনো অবনতি না হয়।’

বাংলা৭১নিউজ/সংগৃহিত: প্রথম আলো/এসএস

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৩ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com