বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের মত বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে।প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হামলাকারীরা তথাকথিত ইসলমিক স্টেটের সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় বিস্ফোরণ ও গুলিতে চার বেসামরিক নাগরিক ও চার হামলাকারী নিহত হয়েছিলেন। সেবারই প্রথম ইন্দোনেশিয়ায় হওয়া কোনো জঙ্গী হামলার দায় স্বীকার করে আইএস।
পরবর্তীতে বলা হয় জাকার্তায় হামলাকারীরা ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক জেমাহ আনসারুত দৌলা ( জেএডি) জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্য, যারা অতীতে নিজেদের আইএস এর সাথে সম্পৃক্ত বলে দাবী করেছিল।
তার পর থেকেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জঙ্গী তৎপরতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করে আইএস।
জাকার্তা হামলার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচারণা বাড়ায় আইএস। সমর্থকদের আরো আক্রমণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ও সরকারকে হুমকি দেয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভিডিওতে তারা ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের ব্যবহার করে।
ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল গ্যাতত নুর্মান্তায়ো ২০১৭’তে এক বক্তব্যে বলেন যে ইন্দোনেশিয়ার প্রায় সব প্রদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে আইএস।
ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানের মৌলবাদী চিন্তাধারীরা ইন্টারনেট ও জিহাদি ওয়েবসাইট থেকে দীক্ষাপ্রাপ্ত নবাগত সদস্য অথবা পুরোনো প্রজন্মের জঙ্গীদের সমর্থক। তবে আগের প্রজন্মের জঙ্গীবাদীদের সাথে বর্তমানে সক্রিয়দের খুব একটা সম্পর্ক নেই মনে করা হচ্ছে।
আইএস এর সাথে নিজেদের সম্পর্ক আছে বলে দাবী করেছে ৩০ টির মত ইন্দোনেশিয়ান দল। যাদের মধ্যে কয়েকটি দল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইএস এর আনুষ্ঠানিক প্রদেশ তৈরী করার বিষয়েও সোচ্চার ছিল।
গত কয়েকবছরে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস এর পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে অনেকে দেশত্যাগ করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ইন্দোনেশিয়ার এসব জিহাদি গোষ্ঠীর অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মনে করা হয় জেএডি’র নেতা আমান আব্দুর রহমানকে, যিনি গত ১২ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ায় কারাগারে রয়েছেন।
সমর্থকদের সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিচারকার্য চলছে। বর্তমানে যেই কারাগারে তিনি রয়েছেন সেটিকে বিশ্লেষকরা আইএস সমর্থক জঙ্গীদের চারণভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইন্দোনেশিয়া কীভাবে এই সঙ্কট মোকাবেলা করছে?
২০০২ এ বালির একটি নাইটক্লাবের বাইরে আল কায়েদার সাথে সম্পর্ক থাকা জঙ্গীদের করা বোমা হামলায় ২০২ জন মারা যায়। এরপর ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী উগ্রপন্থী দলগুলোর ওপর কঠোর অভিযান চালায়।
ঐ অভিযানে ব্যাপক গ্র্রেফতার ও পরিকল্পিত হত্যাসহ ইন্দোনেশিয়ান জঙ্গীদের মনোভাব পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নানা ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ছাড়া পাওয়া জঙ্গীদের পুনর্বাসনের জন্যও নেয়া হয় বিভিন্ন উদ্যোগ।
বালির বোমা হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০০ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে আর ১০০ জনের বেশী জঙ্গীকে হত্যা করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সুরাবায়া’র তিনটি গীর্জায় হওয়া সবশেষ হামলায় ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটি ২০০৫ এর পর ইন্দোনেশিয়ায় হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলা। ২০০৫ এ বালিতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ২০ জনের বেশী মানুষ মারা যায়।
তবে গত কয়েকবছরে ইসলামপন্থী জঙ্গীদের বেশ কয়েকটি করা হামলা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়।
বাংলা৭১নিউজ/বিবিসি/জেড এইচ