বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ২৬ মাসের বকেয়া বেতনসহ যাবতীয় পাওনার দাবিতে চাকুরিচ্যুত ইনকিলাব সাংবাদিক-কর্মচারীরা বুধবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে চাকুরিচ্যুত ইনকিলাব সাংবাদিক-কর্মচারি ঐক্য পরিষদ।
মানববন্ধন থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসুচিতে বলা হয়, আগামী ৩ জুনের মধ্যে ইনকিলাবের চাকুরিচ্যুত সাংবাদিক-কর্মচারিদের পাওনাদি পরিশোধ করা না হলে আগামী ৪ জুন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এছাড়াও ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দিনভর ইনকিলাব গেটে ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
কর্মসূচিতে বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ ইনকিলাবের বিনা নোটিশে গণছাটাইয়ের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দৈনিক ইনকিলাব কর্তৃপক্ষ বিনা নোটিশে এই গণছাটাইয়ের মধ্য দিয়ে জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি গণমাধ্যমের জন্য অশুভ সংবাদ। ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দীনের হাত যতো বড়ই হোক ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপকর্মকে প্রতিহত করা হবে।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে চাকুরিচ্যুতদের সমুদয় পাওনা পরিশোধে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দীনের টালবাহানায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতৃবৃন্দ। ন্যায্য পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ইনকিলাব গেটে অবস্থান কর্মসূচি এবং ইনকিলাব সম্পাদকের বাসভবন ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।
ইনকিলাব বন্ধ এবং পুনরায় প্রকাশের প্রসঙ্গ টেনে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, ইনকিলাব সম্পাদকের অনেক কুকর্ম রয়েছে; তারপরও সেখানে কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীদের দিকে তাকিয়ে আমরা তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্তু আজ সাংবাদিকদের বিনা নোটিশে ছাটাই করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দুর্বৃত্ত বাহাউদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিক নেতারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বলা হয়, ইনকিলাব বন্ধ করে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হোক তা সাংবাদিক কর্মচারীরা চায় না। ইনকিলাবের সম্পাদক ১০০ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করে মানবতাবিরোধী কাজ করেছে। তার বাবা মান্নানও মানবতাবিরোধী রাজাকার ছিলেন। প্রয়োজনে ইনকিলাব বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হবে। অন্যথায় ইনকিলাবের সম্পাদক বাহাউদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা ও তার বনানীর বাড়ীতে অবস্থান নেওয়ারও হুমকি দেন তারা। চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের বকেয়া পাওনা পাওয়ার জন্য তথ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন নেতারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বলা হয়, ইনকিলাব সম্পাদক একজন প্রতারক, ভণ্ড। তিনি বিদেশে টাকা পাচার করে বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় জমিয়েছেন। ইনকিলাব সম্পাদকের সম্পদ তদন্ত করার জন্য দুদক এর প্রতি আহ্বান জানানো হয় এই অবস্থান কর্মসূচি থেকে।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেড়ারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ( বিএফইউজে) মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসানাত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেড়ারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী, সাবেক সহ-সভাপতি জিয়াউল কবির সুমন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, রাজু আহমেদ, কলাণ সম্পাদক আজাদ হোসন সুমন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মাহমুদুর রহমান খোকন, বাংলাদেশ ফেড়ারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক বদরুল আলম খোকন, প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুব আলম, ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি এম এম জসিম প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) যুগ্ম সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, অর্থ সম্পাদক মানিক মুনতাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জিলানী মিল্টন, ক্রীড়া সম্পাদক মজিবর রহমান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শেখ মাহমুদ এ রিয়াত, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জামাল, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আক্তার হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবু, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জহিরুল হক রানা, কার্য নির্বাহী সদস্য খন্দকার আলমগীর হোসেন, ওবায়দুল হক খান, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান খান, বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের সাবেক সেক্রেটারি সিদ্দিকুর রহমান এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সিটি কমিটির সম্পাদক আবুল হোসেন ও বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য আবু তাহের বকুল প্রমুখ।
উল্লেখ্য বকেয়ার মাত্র ৩০ শতাংশ অর্থ বুঝিয়ে দিয়ে সমুদয় পাওনা বুঝিয়া পাইলাম এই মর্মে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর ও টিপ সই দিতে বাধ্য করার অনৈতিক প্রস্তাবনা থেকে ইনকিলাব কর্ত্তৃপক্ষ এখনও ফিরে আসেনি। আলোচনার নামে ইনকিলাবেব হিসাব বিভাগ থেকে গত সোমবারও মালিকের প্রতিনিধিরা একই প্রস্তবনা দিয়েছেন। অথচ ইনকিবলাব সম্পাদককের এই মানবাতাবিরোধী ও গোটা সাংবাদিক সমাজের জন্য অবমাননাকর প্রস্তাবনায় রাজি না হওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল থেকে ৯ মে ২০১৭- এর মধ্যে বিনা নোটিশে ১০০ জন সাংবাদিক-কর্মচারিকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস