জিগজ্যাগ ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করাসহ কোনো ইটভাটা বন্ধ করলে সরকারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স এসোসিয়েশন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান বলেন, আমরা ইটভাটা মালিকরা বিগত ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ সব অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করেছি। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সমতা রেখে আমরা বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্দেশিত আধুনিক প্রযুক্তির জিগজাগ ভাটা স্থাপন করি। যা জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি, টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এখন দেশের ইটভাটাগুলো মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ বায়ু দূষণ করছে। আগে ইটভাটার দূষণমাত্রা ছিল ৫৮ শতাংশ। বিদ্যমান জিগজাগ ভাটায় আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এই শিল্পে প্রায় ৫০ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত আছে। এছাড়াও প্রায় প্রতিটি ইট ভাটার বিপরীতে ১ কোটি টাকার উপরে ব্যাংক লোন রয়েছে। ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক লোন অনাদায়ি থেকে যাবে। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অত্যন্ত আন্তরিক হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে জিগজাগ ইটভাটার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
ইতোমধ্যে ড্রাম চিমনি, ফিক্সড চিমনি ও লাকড়ি দিয়ে পোড়ানো ইটভাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করা সিদ্ধান্তে উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা না করে তার বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে বৈধ পদ্ধতির জিগজাগ ইটভাটায় জরিমানা ও ভাংচুর করছেন।
আমরা কোনো অবস্থাতেই এই সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ঠেলে দিতে চাই না। আমরা আশা করছি প্রধান উপদেষ্টা এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার মাধ্যমেই ইটভাটা পরিচালনার একটি যৌক্তিক সমাধান হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে যে-সব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয় সেগুলো হলো-
১। ২০১৩ সালের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও আইনের ৮(৩) (৬) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় দূরত্ব নির্দিষ্ট করণের কারণে দেশের কিছু জিগজাগ ইটভাটার মালিকরা ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না।
ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলুন এবং টানেল কিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ১ হাজার মিটারের পরিবর্তে ৪০০ মিটার নির্ধারণ করেছে। সুতরাং আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (৪) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০ মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দূরত্ব ৭০০ মিটার করে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারির মাধ্যমে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি।
২। জিগজাগ ইটভাটায় কোনো প্রকার হয়রানি বা মোবাইল কোর্ট করা যাবে না।
৩। কোনো ইটভাটা বন্ধ করতে হলে সরকারিভাবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
৪। পরিবেশগত ছাড়পত্র, ডি.সি লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র ইস্যু/নবায়নের সময় কেন্দ্রীয় ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির প্রত্যয়ন পত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দেওয়ার বিধান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
৫। ইটভাটাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি করছি।
৬। ইটভাটা পরিচালনায় দীর্ঘ মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ