বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: হঠাৎ বেড়ে উঠা স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটের আওতা ও নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ছে। খেলাফত দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে। জুন মাসে আইএস জঙ্গিদের ফালুজা থেকে বিতাড়িত করেছে ইরাকি সেনাবাহিনী। এরপর তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমান হামলারও শিকার হয়।
আমেরিকার সমর্থনপুষ্ট সিরীয় বিদ্রোহীরা আইএস জঙ্গিদের উত্তরের শহর মানবিজে ঘিরে ফেলেছে এবং এখন তাদের দৃষ্টি আইএসের রাজধানী হিসেবে পরিচিত রাকার দিকে।
আইএস ইরাকের যত ভূখণ্ড দখল করেছিল তার অর্ধেকই হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সিরিয়াতেও তারা নিজেদের দখলের ২০ ভাগ ভূখণ্ড হারিয়েছে। লিবিয়াতেও আইএসের শক্ত ঘাঁটি হাতছাড়া হওয়ার পথে বলে জানা গেছে।
তবে সবচেয়ে বড় লড়াইটা এখনো শুরু হয়নি। উত্তর ইরাকের রাকা ও মসুল নামের বড় দুটি শহর এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে।
আইএস জঙ্গিরা চাইবে মরণপণ লড়াই করে হলেও এসব শহর রক্ষা করতে। কারণ এখান থেকে বিতাড়িত হওয়া শুধু ভূখণ্ড হারানোর চেয়েও বেশি কিছু। তাদের নির্মমতা ছাড়াও তারা অন্য জঙ্গি সংগঠন থেকে নিজেদের আলাদা করতে পেরেছে এবং ভূখণ্ড দখল করে শাসন করে তারা আল-কায়েদাকেও পেছনে ফেলেছে।
তারা যদি এখন ভূখণ্ড হারায় এবং ইসলামী খেলাফতের মরীচিকা দেখানোর সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায় তবে যেসব মুসলিম তাদের সমর্থন করে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। কাজেই তারা এখন খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত।
অনেক উপায়েই আইএস বহুলাংশে প্রথাগত রাষ্ট্রবিহীন সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। গত মে মাসে এক অপ্রত্যাশিত ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আইএসের মুখপাত্র আবু মুহাম্মদ আল-মাদানি বলেন, তার সংগঠন ভূখণ্ডের জন্য লড়ছে না।
তারা অবশ্যই রাকা ও মসুল রক্ষার চেষ্টা করবে। তবে তারা গেরিলা লড়াইয়েরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাদানি আইএস অনুসারীদের বিদেশে তাদের শত্রুদের ওপর আঘাত হানার আবেদন জানান।
‘তোমরা আমাদের সাথে থাকার চেয়ে যদি তাদের অন্তরভূমিতে আঘাত হানার মত ছোট্ট একটি কাজ কর তা আমাদের জন্য অনেক বেশি ফলদায়ক এবং অনেক দীর্ঘস্থায়ী,’ বলেন মাদানি।
অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী তার আবেদনে সাড়া দেয়। গত এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো, ইস্তাম্বুল, ঢাকা, বাগদাদ ও জেদ্দায় হামলায় শত শত মানুষ মারা গেছেন। এসব হামলার কয়েকটির নির্দেশদাতা আইএস, অন্যগুলো তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত। এসব হামলা ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের ব্যর্থতার দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, আগামীতে তাদের হামলা আরো বাড়বে।
‘আগামী ১২টি মাস গত ১২ মাসের চেয়ে খুব সম্ভবত রক্তাক্ত হবে,’ বলছিলেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ফাওয়াজ জার্জেস।
আইএসকে যতটা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াশীল বলে মনে হয়, তাদের কৌশল তা নয়। বছরের পর বছর ধরে তারা পাশ্চাত্যে স্বেচ্ছাসেবক পাঠিয়েছে। প্যারিস, ব্রাসেলস এবং ইস্তাম্বুলের সাম্প্রতিক হামলা তাদের পরিণত নেটওয়ার্কের ফসল।
সিআইএ’র পরিচালক জন ব্রেনান বলেছেন, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোট তাদের অর্থভাণ্ডারের ওপর চাপসৃষ্টি এবং পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের ক্ষমতাকে খর্ব করেছে। তবে সন্ত্রাসের বীজবপনের ক্ষমতা আইএসের এখনো রয়েছে।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, পুরোপুরি রাষ্ট্রবিহীন হলে আইএসের আবেদন অনেকাংশে হারিয়ে যাবে। তাদের পশ্চাদপসরণের প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকার একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, আইএসের যোদ্ধার সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গেছে। তবে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের গবেষক উইলম্যাককান্টস বলেন, ভূখণ্ড হারালে তার সমর্থকরা আরো অনুপ্রাণিত হতে পারে।
তিনি ২০০০ সালের শেষের দিকের কথা উল্লেখ করে বলেন, তখন তারা পরাজিত হলেও সে সময়টাতেই বহু অনুসারী তাদের পতাকা তুলে নেয়।
এরপর আইএস আল-কায়েদার সাথে জোট বাধে। ২০১৪ সালে তারা আবার পৃথক হয়ে যায়। এমনকি আল-কায়েদাও তাদের খুবই চরমপন্থী বলে মনে করে। তারা এখন সিরিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছে, প্রতিযোগিতা করছে নিয়োগদান ও সহযোগী বাড়াতে।
তাতে আইএস সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায়। যেমন নাইজেরিয়ার বোকো হারাম আল-কায়েদার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলেও ২০১৫ সালের মার্চে তারা আইএসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে।
আগামী বছর বা তার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আইএস সম্ভবত রাকা ও মসুল থেকে বিতাড়িত হবে। যেভাবে চাপ বাড়ছে তাতে আইএস ‘বিশ্বব্যাপী তাদের সন্ত্রাসবাদী এজেন্ডায় আধিপত্য ধরে রাখতে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদী প্রচারণা জোরদার করবে বলে আমরা মনে করছি,’ বলছিলেন ব্রেনান।
তবে তারা খেলাফতের লক্ষ্য থেকে পিছু হটবে বলে মনে হয় না। কারণ যে পরিস্থিতিতে আইএস গঠিত হয়েছিল তাতে আজও তেমন পরিবর্তন আসেনি। সাম্প্রদায়িক ও অকার্যকর সরকার আজও ইরাক ও সিরিয়া শাসন করছে। আইএসকে তার হারানো ভূখণ্ডে ফিরতে বাধা বাধা দেবে কে?
বাংলা৭১নিউজ/এমএস