ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ সংকটের এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিকারকরা রেকর্ড রপ্তানি বাড়াচ্ছে। টানা তৃতীয় মাস সর্বোচ্চ পরিমাণ রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলো। রাশিয়ার ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই জ্বালানি সরবরাহ উদ্বেগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গ্যাসের দাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপে গ্যাসের দাম যখন রেকর্ড সর্বোচ্চ সীমায় উঠেছে তখন আশার দিক হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোর করা অনেক প্রকল্প সরবরাহ পর্যায়ে চলে এসেছে।
শেল গ্যাস নিয়ে এ প্রকল্পগুলো কয়েক বছর ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছিল।
দেশটির সবচেয়ে বড় গ্যাস রপ্তানিকারক কম্পানি চেনিয়েরে এনার্জি। কম্পানিটি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপে এলএনজি রপ্তানির জন্য বেশ কিছু দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি করেছে। এমনকি ট্রাফিগুরা, গানভার এবং জাপানি যেসব কম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাস টার্মিনালে কাজ করছে, তারাও তাদের কার্গোগুলো কম মূল্যের বাজার থেকে ফিরিয়ে উচ্চ মূল্যের ইউরোপীয় বাজারে পাঠাচ্ছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর গত সপ্তাহে এলএনজির দাম প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থারমাল ইউনিটের (এমএমটিটিইউ) দাম রেকর্ড প্রায় ৬০ ডলারে উঠে যায়, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি দাম। যদিও পরে দাম কিছুটা কমে ৫১ ডলারে বিক্রি হচ্ছে এমএমটিটিইউ।
রাশিয়া হচ্ছে বিশ্বে তেলের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিকারক ও গ্যাসের শীর্ষ রপ্তানিকারক। এমনকি ইউরোপের প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেনও। এতে রাশিয়া পাল্টা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ না করার হুমকি দিয়েছে। ফলে গ্যাসের দাম আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসন প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি রপ্তানি বেড়ে দাঁড়াবে দিনে ১১.৪ বিলিয়ন কিউবিক ফিট (বিসিএফডি)। গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকরা জানান, আগামী বছর বিশ্বে এলএনজি চাহিদা থাকবে ৫৩.৩ বিসিএফডি। যার প্রায় ২২ শতাংশ সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ দুই রপ্তানিকারক কাতার ও অস্ট্রেলিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ব্যবসায়ী জানান, গত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্র আগের গন্তব্য এশিয়ার বাজারে না পাঠিয়ে কয়েক ডজন কার্গো ইউরোপের বাজারে পাঠিয়েছে। একটি কার্গোতে সাধারণত তিন বিলিয়ন কিউবিক ফিট প্রাকৃতিক গ্যাস থাকে।
আইসিআইসির ডাটা বিশ্লেষণ করে এলএনজি বিশ্লেষক রোবার্ট সংগার বলেন, ‘২০২২ সালের প্রথম দুই মাসে ইউরোপ ও তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড ১৬৪ কার্গো প্রবেশ করেছে। ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে এসব গন্তব্যে কার্গো গিয়েছিল ১২৫টি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক হিসাবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে ৬.৪ মিলিয়ন টন এলএনজি রপ্তানি করা হয়, যা প্রায় ৩০৭ বিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাসের সমান। প্রতি এমএমটিটিইউ ৫৬ ডলার ধরে ইউরোপের বাজারে যার মূল্য দাঁড়ায় ১৭.২ বিলিয়ন ডলার। যেখানে এশিয়ার বাজারে এর দাম আসত ১৩.৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতি এমএমটিটিইউ ৪৪ ডলার ধরে। সূত্র : রয়টার্স।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম