দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মিত্র হয়ে ওঠা জাতীয় পার্টিকে কতোগুলো আসন ছাড় দিয়ে সেখানে নৌকার প্রার্থী উঠিয়ে নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও সমঝোতায় আসতে পারেনি দুটি দল।
শনিবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেও সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি। রোববার আবারো বৈঠকে বসতে পারে দল দুটির প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি নেতারা বেরিয়ে গেলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে দলটির জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং নির্বাচনী কো চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যায় দলের নেতাদের নিয়ে একই জায়গায় দুই দফায় বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আগেরদিন শুক্রবার রাতেও বৈঠকে বসেছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা। সেই বৈঠকেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি তারা। শনিবার রাতে চতুর্থ দফা বৈঠকও শেষ হলো কোনো প্রকার সমাধান ছাড়া।
বৈঠকের পর জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ জানান, দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হলেও আসন ছাড় নিয়ে তারা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। রোববার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হতে পারে বলে জানান তিনি।
সমঝোতাহন বৈঠকের কথা বলেছেন দলের কার্নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতও। তিনি বলেন, এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি।
বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষ কথা না বললেও একটি সূত্র বলছে, আসন ছাড় দেওয়া নিয়ে দুই দলের ‘প্রায় সমঝোতা’য় পৌঁছেছে। আগামী দিনের বৈঠকে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়ে যাবে এবং দুই দল সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে।
সূত্র মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের যে ২৬টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল সেভাবে আসন ছাড় দিতে চাইছে আওয়ামী লীগ। কিন্ত এবার জাতীয় পার্টির চাহিদা একটু বেশি। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির দাবি, তাদের যেসব আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবে, সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বসিয়ে দিতে হবে। কিন্তু স্বতন্ত্র এই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়ে কঠোর হতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। এমনকি নৌকার প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে দল থেকে।
২০০৮ সাল থেকেই ১৪ দল ও আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করে আসছে। তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দুটিতে জোটের শরিক হিসেবে ছিল জাতীয় পার্টিও। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের পর জাতীয় পার্টি জোটে ছিল না। এবারও বিএনপি ভোটে আসেনি, জাতীয় পর্টিকেও জোটে রাখা হয়নি।
২০১৪ সালে জোট না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে-এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। সেসব আসনেই জয় পায় দলটি। একাদশে জোট করার পর তাদেরকে দেওয়া হয় ২৬টি আসন, এর মধ্যে তারা জয় পায় ২৩টিতে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার কৌশল পাল্টেছে। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় কোনো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যেন দশম সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় না পায়, সেজন্য দলের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জিতেছে, এমন আসনগুলোতে এখন পর্যন্ত নৌকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছে। সেসব আসনেই জয়ের নিশ্চয়তা চায় জাতীয় পার্টি। অর্থাৎ কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় না জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
তবে আওয়ামী লীগ যে তা চাইছে না, সে কথা শুক্রবারও বলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচন করবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, প্রতিযোগিতা হবে। স্বতন্ত্র নির্বাচনে জিতলে জিতবে। আমরা জোর করে কারও বিজয় ছিনিয়ে আনব না।’
‘আমরা কাউকে বিজয়ের গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমারও বিজয়ের গ্যারান্টি নেই। আমাকেও চারজনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে কেউ জিতে যায়, আমাদেরকে আমাকে মানতে হবে। এখানে হার-জিতের প্রশ্ন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ