বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দিবস পালন নিয়ে বিতর্কে জড়ালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দুইজনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে এমন বিতর্ক হয়েছে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্য ও শোক প্রস্তাব পাঠ করার পর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যে সব কর্মসূচির কথা উল্লেখ আছে তা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনার প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে এবং ঘোষণাপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে কোন কোন দিবস পালন করা হবে। এর বাইরেও আমরা কিছু দিবস পালন করি। কিন্তু এ দিবসগুলো বৈঠকের এজেন্ডায় থাকতে পারে না। এসব দিবসের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনাও হতে পারে। গঠনতন্ত্রের বাইরে কোন দিবস কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের এজেন্ডায় আসতে পারে না।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২১ আগস্টকে আমরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা বলব। শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টা দিবস বললে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কথা মনে পড়ে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনও দফতর থেকে সরবরাহ করা ফাইলে এজেন্ডা হিসেবে ছিল।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, কিছু দিবস আছে যেগুলো সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো পালন করে। এ বিষয়গুলো দফতর সম্পাদককে আরো গভীরভাবে দেখতে হবে।
দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, এ দিবসগুলো আমরা প্রতি বছর এভাবেই পালন করে আসছি।
এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম বক্তব্য দেয়ার সুযোগ চাইলে বৈঠকের সভাপতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের বসিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু তার বক্তব্যে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আর ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক।
উত্তরে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, গঠনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে সেভাবেই হবে। গঠনতন্ত্রের বাইরের দিবসগুলো বৈঠকের এজেন্ডায় আনার দরকার নেই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট আর গ্রেনেড হামলা এক না।
আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যতই বাধা বিপত্তি আসুক, নির্ধারিত সময়েই দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য গঠনতন্ত্র ঘোষণাপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সকল দায়িত্বপ্রাপ্তদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন তিনি।
নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জঙ্গি-সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পৃক্ত হয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিদের প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সব আওয়ামী লীগের লোকজনদের দিয়ে কমিটি গঠন করলে হবে না। এসব কমিটি গঠন করলে একটা ফলাফল পাব। শিগগিরই জঙ্গি প্রতিরোধ সম্ভব হবে। ওরা অনেকটা ভয় পেয়েছে।
বৈঠকে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় আলোচনায় আসে হেফাজত ইসলাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগকে অবৈধ হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে আন্দোলনের হুমকির বিষয়টি উঠে আসে।
এ প্রসঙ্গে বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে জুম্মার নামাজের সময়ে বয়ানে জঙ্গি-সন্ত্রাস বিরোধী বিষয় রাখতে ঈমামদেরকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরামর্শ দিচ্ছে। জুম্মার খুতবাহ বলে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।
বৈঠকে খুলনা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অভিযোগ দেন কেন্দ্রীয় সদস্য মুন্নুজান সুফিয়ান। প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হককে পুনরায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া নওগাঁ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নওগাঁ জেলার কমিটিতে তিনটি সদস্য পদ ফাঁকা রয়েছে। আর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/সিএইস