বাংলা৭১নিউজ,(নওগাঁ)প্রতিনিধি:নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। গেলো কয়েকদিন ধরে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বর্তমানে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনা নদীর পানি লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। নদীর সঙ্গে সঙ্গে বিলের পানিও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।ফলে জেলা সদর, মান্দা, আত্রাই, রাণীনগনরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছের পুকুর।এবারের বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বন্যার পানিতে তছনছ হয়ে যায় মানুষের জীবন-যাত্রা। সম্প্রতিকালে বন্যার পানি কমে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষ কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারও বন্যার পানিতে ডুবতে শুরু করেছেন তারা।এদিকে কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়িবাঁধের কয়েকটি ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে বিলে।
বিশেষ করে হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের ফকিন্নি নদী ও আত্রাই নদীর জাত আমরুল নামক স্থানের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।অনেকের বসতবাড়ি বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের উদনপৈয়, মিরাপুর, ফুলবাড়ি, পূর্ব মিরাপুর, রসুলপুর, জাতোপাড়া, আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের আমরুল কসবা, সিংসাড়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের রাইপুর, আটগ্রাম, দুর্গাপুর, মদনডাঙ্গা, শলিয়া, হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের বান্ধাইখাড়া, সন্নাসবাড়ি, হাটুরিয়া, দ্বীপচাঁদপুর, পাহাড়পুর, চকশিমলা, হাটকালুপাড়া, নন্দোনালি, কচুয়া, উত্তর বিল, গুড়নই, মালিপুকুর, মান্দা উপজেলার কালিকাপুর, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক ও রাণীনগর উপজেলার কয়েকটি গ্রামসহ প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ।
হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর সরদার জানান, এবারের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফার বন্যায় উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়নটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে পানিবন্দি আছে হাজার হাজার মানুষ। তারা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।আত্রাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত বিভিন্ন গ্রামে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করলেও অন্যান্য উপজেলাতে এখনও সরকারিভাবে কোনও সহায়তা দেয়া হচ্ছে না। আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) ছানাউল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বন্যার্ত কোনও মানুষ যেন অনাহারে বা অর্ধাহারে না থাকে।
সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বন্যার্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রয়োজনের আরও সহযোগিতা করা হবে। সেইসঙ্গে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আত্রাই উপজেলার বন্যার্ত বানভাসী মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন অসহায় বানভাসী মানুষেরা। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খাঁন বলেন, আরও কয়েক দিন নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তবে যেভাবে নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নওগাঁর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এবি