বাংলা৭১নিউজ, মোঃ হুমায়ূন কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: সরকারি-বেসরকারি শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে আবাসিক চাহিদা পূরণ করতে গত কয়েক দশক ধরে আশুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে ভরাট করা হচ্ছে শত শত ছোট-বড় পুকুর-ডোবা-নালা ও কয়েক হাজার একর নিচু ও কৃষি ভূমি। এতে যেমন কমছে কৃষি ভূমি তেমনি ধ্বংস হচ্ছে উন্মুক্ত জলাশয়-জীব-বৈচিত্র্য, পানির স্তর চলে যাচ্ছে নিচে, বাড়ছে তাপমাত্রা, অল্প বৃষ্টিতেই দেখা দিচ্ছে অসহনীয় জলাবদ্ধতা। সচেতন মহল মনে করে, এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরি ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অচিরেই এ গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক স্থানটিতে দেখা দেবে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। সরকারের সংশ্নিষ্ট বিভাগও এ বিষয়ে একমত পোষণ করে এ ব্যাপারে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
জানা গেছে, গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের পর ভৌগোলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান আশুগঞ্জে সরকারি ব্যবস্থাপনায় একে একে গড়ে উঠে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ সারকারখানা, সাইলো, গ্যাস ট্রান্সমিশন ও গ্যাস কম্প্রেসার স্টেশন, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক ও দ্বিতীয় ভৈরব রেলসেতুসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে আশুগঞ্জ নদীবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নির্মাণ, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, দ্বিতীয় সারকারখানা স্থাপন ও আরও একটি অত্যাধুনিক সাইলো নির্মাণকাজ।
এদিকে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বা উঠছে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছোটখাটো বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও চার শতাধিক চাতাল কল। এসব শিল্প কারখানাকে ঘিরে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে বাড়ছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের চাহিদাও। ফলে আশুগঞ্জ সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকায়ও গড়ে উঠছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। এসব কারণে গত কয়েক দশকে শুধু আশুগঞ্জ, সোনারামপুর, চরচারতলা, আড়াইসিধা ও যাত্রাপুর মৌজায় কয়েক‘শ’ ছোট-বড় পুকুর-ডোবা-নালাসহ কয়েক হাজার একর নিচু ও কৃষি জমি ভরাট করা হয়েছে এবং এখনও তা করা হচ্ছে।
সংশ্নিষ্ট একটি নির্ভরশীল সূত্র জানায়, সারাদেশে বছরে ১ শতাংশ কৃষি জমি অকৃষি জমিতে রূপান্তর হলেও আশুগঞ্জ উপজেলায় এ হার প্রায় ৪ শতাংশের বেশি। অপরিকল্পিত ও ব্যাপক হারে ডোবা-নালা-পুকুর, নিচু ও কৃষি ভূমি ভরাটের ফলে যেমন কৃষি ভূমি কমছে তেমনি পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই আশুগঞ্জ পূর্ববাজার, শরীয়তনগর ও চরচারতলাসহ অনেক স্থানেই দেখা দিচ্ছে মারাত্মক জলাবদ্ধতা, ব্যাহত হচ্ছে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা।
এছাড়া বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক জলাশয়ের দেশীয় মাছসহ নানা প্রজাতির জলজ প্রাণী। এদিকে প্রাকৃতিক জলাধার ধ্বংস, কলকারখানার যন্ত্রপাতির দুর্ষণ, নির্গত বর্জ্য ও ধোঁয়ার প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য, বাড়ছে স্থানীয় গড় তাপমাত্রা এবং ভূগর্ভস্থ মিঠা পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, গত কয়েক বছরে এখানকার তাপমাত্রা এমন পর্যায়ে বেড়েছে যে, গ্রীম্মকালে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশপাশ এলাকায় জন-চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। আশুগঞ্জে এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ভৌগোলিক সুবিধাজনক স্থানটিতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার দাবি জানান এলাকাবাসী। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় কৃষি এবং মৎস্য বিভাগও এ বিষয়ে একমত পোষণ করে জনগণসহ সংশ্নিষ্টদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোসাব্বের হোসেন রাজীব নানা কারণে আশুগঞ্জে ভূমি ভরাটের কথা স্বীকার জানান, জলাভূমি বা নিচু ভূমি কমে গেলে গাছপালাও কমবে। পানির স্তর নিচে চলে যাবে। এক সময় মিঠা পানির ঘাটতি দেখা দেবে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ ক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে অধিক বৃক্ষ রোপণ ও জলাধার সংরক্ষণে সচেতন হয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান জানান, জলাভূমিসহ উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার করার জন্য সবাইকে এসব বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রতি আহবান করেন।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস