বাংলা৭১নিউজ, নাজিম বকাউল, ফরিদপুর প্রতিনিধি: হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সুযোগ সন্ধানী প্রভাবশালী একটি মহল। গত কয়েকদিন ধরে এ গ্রামের প্রায় ২০টি বাড়ীতে সিরিজ হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে। এখনো চলছে হামলা, ভাংচুর। প্রানের ভয়ে এখন গ্রামছাড়া রয়েছে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। হামলাকারীরা টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, আলমিরা, খাট, সো-কেস ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্রসহ একাধিক পাকা ভবন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবার পাশাপাশি ভবনের গ্রিল, দরজা-জানালা পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাচ্ছে। ধান, পাট লুটের পাশাপাশি কেটে নেয়া হয়েছে বড় আকারের বিভিন্ন প্রজাতির গাছও। খুলে নেয়া হয়েছে টিনের চালা, বৈদ্যুতিক মিটারসহ সব ধরনের সরঞ্জাম। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না গবাদি পশুও। লুটে নেয়া হয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী, কবুতর। খুলে নেয়া হয়েছে টিউবয়েল, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে রান্না করার চুলা ও ল্যাট্রিন পর্যন্ত। আড়পাড়া গ্রামের বেশকিছু বাড়ীতে মধ্যযুগীয় কায়দায় এমন সিরিজ হামলা চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই কার্যকরী ব্যবস্থা। ফলে একটি পক্ষের লোকজন গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। প্রান বাঁচাতে বাড়ী-ঘর ছেড়ে চলে যাবার কারনে সুযোগ সন্ধানী চক্রটি বাড়ীর সমস্ত মালামাল লুটে নেবার পর বসত বাড়ী গুলো এখন বিরান ভুমিতে পরিনত হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা এক কাপড়ে ঘর ছেড়েছে। সবকিছু হারিয়ে অনেক পরিবার এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের আত্বীয়-স্বজনদের বাড়ীতে থাকলেও কিছু পরিবার একেকদিন একেক বাড়ীতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারছেনা।
স্থানীয় এলাকাবাসী, পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, গ্রাম্য বিরোধের জের ধরে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন জিন্নাত নামের এক ব্যক্তি। এ ঘটনার পর নিহতের চাচাতো ভাই এমদাদুল হক বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলার পর গ্রেফতার এড়াতে আসামীরা গ্রাম ছাড়ার সুযোগে নারকীয় তান্ডব চালায় গ্রামের কিছু বাড়ীতে। মামলার বাদীর সাথে সুযোগ সন্ধানী একটি চক্র হাত মিলিয়ে গ্রামটিতে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। দিনে-রাতে বেশকিছু বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। কয়েকদিন ধরে এমন নারকীয় হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর চালানোর কারনে গ্রামের অনেক পরিবার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়। আর এ সুযোগ নিয়ে চক্রটি মশিউর রহমান মোল্যা, গোলাম মোল্যা, মোহাম্মদ মোল্যা, আহমেদ মোল্যা, সেলিম মোল্যা, আঃ মান্নান মোল্যা, মিন্টুসহ কমপক্ষে ২০টি বাড়ীতে হামলা চালানো হয়। গত শুক্রবার সরেজমিন আড়াপাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। অজানা আতংকে কেউ কোন কথা বলতে চাননা। বাইরে থেকে কেউ এলে তাকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। গ্রামের একটি মহলের সহযোগীতায় অন্য গ্রাম থেকে আসা কতিপয় ব্যক্তি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হামলা চালাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। হামলার শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একটি হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে রেজাউল, নায়েব, আরব আলী, মিস্টার, জুয়েল, রাজেদুল, মিলন, সুমনসহ প্রভাবশালী আরো কিছু ব্যক্তি হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটে নেতৃত্ব দিচ্ছে। লুটপাট ও ভাংচুরের সময় হামলাকারীরা নারী ও তরুনীদের লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের কয়েকজন জানান, পরিকল্পিতভাবে একেকদিন একেক বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। সুযোগ সন্ধানী একটি চক্র গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন বাড়ী টার্গেট করে বাড়ীর গৃহকর্তাকে হুমকি দিয়ে বাড়ী ছাড়া করছে। পরে তারা সেই বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও মালামাল লুটে নিচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকজন যাতে গ্রামে না আসতে পারে সেজন্য দিনে-রাতে বসানো হয়েছে পাহারা। স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, হামলার শিকার হওয়া ঘরের ভেতরে পায়খানা-প্রসাব করে নোংরা করছে হামলাকারীরা। অভিযোগ রয়েছে, হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও রহস্যজনক কারনে পুলিশ কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করছেনা । এমনকি খুনের ঘটনার পরে পুলিশের উপস্থিতিতেও লুটপাট হয়েছে।
হত্যাকান্ডের ঘটনার মামলার বাদী এমদাদুল হক বলেন, মামলার আসামীরা নিজেরাই নিজেদের মালামাল সরিয়ে নিয়ে বাড়ী-ঘর ভাংচুর করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজমুল করিম জানান, খুনের ঘটনার পর কয়েকটি বাড়ীতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোন বাড়ীতে যাতে হামলা ভাংচুর না হয় সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস