নাফনদী ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আরাকান আর্মির হাতে আটক হচ্ছেন কক্সবাজারের টেকনাফের স্থানীয়সহ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জেলেরা। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জেলে পরিবারগুলো। গত ১৩ দিনে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাসহ ২৯ জেলে আরাকান আর্মির হাতে আটক হয়েছেন।
জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরুর ১০ মাসের মধ্যে আরাকান আর্মি মিয়ানমার-বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের মিয়ানমার অংশের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণসহ সীমান্ত চৌকি, সেনা ও বিজিপি ক্যাম্প এবং মংডু শহরসহ একাধিক শহর দখল করেছে।
সাগরের মিয়ানমারের অংশ থেকে গত বছরের ৫ নভেম্বর শাহপরীর দ্বীপের ২০ জন জেলেকে আরাকান আর্মি আটক করে। আটকের পর বিজিবির তৎপরতায় তখন আরাকান আর্মি জেলেদের ফেরত দিয়েছিল।
এরপর এ বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের হ্নীলা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের ৬ রোহিঙ্গা জেলে ও ১১ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ পাড়ার ৪ জেলেকে আটক করে আরাকান আর্মি। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া থেকে ১০ জেলেকে আটক করে তারা।
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮ জেলে মো. ফারুক মাঝি, মো. ইব্রাহিম, আব্দুল মোনাফ, মো. রায়হান, সৈয়দ উল্লাহ মাঝি, ইমাম হোসেন, সৈয়দ আলম এবং টেকনাফ আলীখালী ক্যাম্পের কেফায়েত উল্লাহ এখনো আরাকান আর্মির হাতে বন্দি।
শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়ার হাসানের স্ত্রী নুর নাহার বেগম বলেন, নাফনদী থেকে আমার স্বামীকে আরাকান আর্মি আটক করে নিয়ে গেছে। আজ ১২ দিন হচ্ছে হাসান বাড়ি ফিরতে পারেনি। পরিবারের খরচ জোগাড় করতে পারছি না। আমরা অসহায় পরিবার, কাজ করতে পারলে খরচ জোগাড় হয়। আমার স্বামী আরাকান আর্মির হাতে বন্দি। তাকে কখন ফিরে পাবো জানি না।
শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া জেলে ঘাটের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ বলেন, জেলেরা সাগরে মাছ শিকার করতে যায়। অনেক সময় তাদের বাড়ি ফেরার পথে আরাকান আর্মি আটক করে।
আবার অনেকেই নাফ নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ভুলবশত মিয়ানমার সীমান্তের দিকে চলে যায়। তখন হয়ত আরাকান আর্মির সদস্যরা জেলেদের আটক করে নিয়ে যায়। তবে এমন ঘটনায় জেলে পরিবারগুলো আতঙ্কিত। এক্ষেত্রে জেলেদের সতর্কভাবে নাফনদী ও সাগরে মাছ ধরা দরকার।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম মেম্বার বলেন, উপকূলীয় অধিকাংশ মানুষ নাফ নদী ও সাগরে মাছ ধরে সংসারের খরচ জোগাড় করে। আরাকান আর্মির হাতে গত ১৩ দিনের মধ্যে শাহপরীর দ্বীপ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৯ জন জেলে আটক হয়েছেন। এ ঘটনায় জেলে পরিবারের মধ্যে চলছে আহাজারি। তারা চান তাদের স্বজনদের ফেরত পেতে।
উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পের মাঝি আলী আজগর বলেন, গত বৃহস্পতিবার কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্পের ৮ জন রোহিঙ্গা সাগর থেকে মাছ ধরে টেকনাফ কাইয়ুমখালী ঘাটে ফেরার পথে আরাকান আর্মির সদস্যরা দুইটি ট্রলারসহ তাদের আটক করে নিয়ে যায়। তারা এখনো ছাড়া পাননি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প সিআইসিসহ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মাছ ধরার ক্ষেত্রে জেলেদের সতর্ক হতে হবে। আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের বিষয়ে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। জেলেদের ফেরত আনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে