বাংলা৭১নিউজ,টঙ্গী : আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে আজ শুক্রবার ফজর নামাজের পর ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির মাওলানা শামীম এ বয়ান দেন। বাংলায় এর তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো: নূর রহমান।
টঙ্গীর তুরাগ তীরে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আজ দুপুরেই দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি আদায় করেন জুমার নামাজ। এতে ইমামতি করেন দিল্লি মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভী।
জুমার নামাজের আগে পুরো ইজতেমা ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বয়স্কদের সঙ্গে শিশুরাও জুমার নামাজ আদায় করেন। ময়দানের মোট ১৭টি প্রবেশ পথ দিয়ে জুমায় যোগ দেন মুসল্লিরা। ইজতেমার স্বেচ্ছাসেবকরা প্রবেশদ্বারগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। মূল প্যান্ডেলের বাইরেও অনেক মুসল্লিকে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
ইজতেমার মাঠের জিম্মাদার তাবলিগের মুরুব্বি গিয়াস উদ্দিন জানান, জুম্মার নামাজে দেশী বিদেশী প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। তাবলিগ অনুসারি দলের সদস্য, তাবলিগ জামাতের কর্মী এবং টঙ্গী, গাজীপুর ও ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোর মুসল্লিরা অংশ নেন এ নামাজে।
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। লাখো মুসল্লির নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সাদা পোশাকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ১০ হাজার সদস্য কাজ করছেন তুরাগ তীর ঘিরে। এছাড়া ইজতেমার পুরো ময়দান, ময়দানের চারপাশ ও বাহিরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এ বছর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এ সিসিটিভি ক্যামেরা যুক্ত করা হয়েছে।
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্বে ১৬টি জেলার জামাতবদ্ব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জেলাওয়ারী ২৭টি খিত্তায় অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্বের দেশের ১৭টি জেলার মুসল্লিরা ২৯টি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। বাকী ৩১ জেলার মুসল্লিরা আগামী বছর (২০১৮) ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমায় শরীক হবেন বলে জানা গেছে।
৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে রাজধানী ঢাকাসহ অংশ নেয়া ১৭টি জেলা হলো-ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখলী, পাবনা, নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, কক্রবাজার, বাগেরহাঁট, কুষ্টিয়া, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ি, মেহেরপুর, লালমনিরহাঁট ও দিনাজপুর।
প্রথম পর্বে অংশ নেয়া ১৬টি জেলা ছিল-গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বি-বাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, রংপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, বান্দববান, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, যশোর, খাগড়াছড়ি, জয়পুরহাঁট, মৌলভী বাজার ও সাতক্ষিরা।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি শেষ হয়। বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির দিল্লীর মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন।
আজ ২০ জানুয়ারি, শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্ব। সারা মুসলিম জাহানের সুখ, শান্তি, অগ্রগতি, কল্যাণ, ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে আগামী ২২ জানুয়ারি, রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের আসরের সমাপ্তি হবে।
দিল্লির মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ দ্বিতীয় পর্বেও আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে এ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমা মাঠের বিদেশী খিত্তায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোরকা পরিহিত আলী মুন্সী (২৬) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তার পিতার নাম মকবুল হোসেন মুন্সি। চাঁদপুর জেলার সদরথানা ষোলঘর এলাকায় তার বাড়ি। টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ওসি ফিরোজ তালুকদার আজ জানান, আটককৃত যুবক আলী মুন্সী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ইজতেমা মাঠের উত্তর পশ্চিম কোণায় অবস্থিত বিদেশী অতিথিদের কামরায় প্রবেশের চেষ্টা করেন। পুলিশ ও ইজতেমার নিরাপত্তাকর্মীরা তখন তাকে বাধা দিয়ে সরিয়ে দেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পর ওই যুবক পূনরায় বোরকা পরে ভেতরে প্রবেশ করার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও ওসি জানান।
দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী, গাজীপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজার হাজার মহিলা মুসল্লি এখন টঙ্গী, গাজীপুর, তুরাগ, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, দক্ষিণখান, উত্তরখান থানা এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও স্বজনের বাসায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। তার মধ্যে অসংখ্য মহিলা মুসল্লি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও টঙ্গী তুরাগ পাড়ের পশ্চিম কোনে হাজী মনসুর আলীর বাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আগামী রোববার ইজতেমা ময়দানের আশেপাশের বাসাবাড়ি, বিভিন্ন মিলকারখানা ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে মহিলা মুসল্লিরা আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন।
দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় তুরাগ তীরকে কেন্দ্র করে টঙ্গী-গাজীপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-সিলেট-কালিগঞ্জ সড়ক, আব্দুল্লাহপুর-সাভার-মিরপুর সড়কে প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার জুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মুসল্লিদের কাফেলা ইজতেমা অভিমুখে আসতে শুরু করেছেন।
বাংলা৭১নিউজ/এম