বাংলা৭১নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে শওকত ওসমান রচি: বাংলাদেশের আইসিটি বিষয়ক ৫৭ ধারাকে কালো আইন বলে অভিহিত করে তা বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভায়।
নিউইয়র্কে গত ৩ মে রাতে ‘বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় নিউইয়র্কে কর্মরত সাংবাদিকরা এই দাবি জানান। সভায় সাংবাদিকরা বলেন-বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিকদেরও নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন হতে হবে। সমাজের কল্যাণ ও সত্য প্রকাশে সাংবাদিকদের অবিচল থাকতে হবে। তারা আরো বলেন-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন । এমন কি, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে সাংবাদিক খুনও হচ্ছেন।
বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রেও সাংবাদিকরা সমসময় অবাধ ও স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করছেন-এমন দাবি করা যাবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান রচি।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিচয় পত্রিকা’র সম্পাদক নাজমুল আহসান, আজকাল পত্রিকার প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো, প্রবাস পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ ও উপদেষ্টা সম্পাদক সৈয়দ ওয়ালী উল আলম, সাংবাদিক মুজাহিদ আনসারী, জয়নুল আবেদীন, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা’ কার্যালয়ের ডেপুটি ব্যুরো চীফ শাহাব উদ্দিন সাগর ও জনতার কণ্ঠের সম্পাদক শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক মনজুরুল হক, কোষাধ্যক্ষ মশিউর রহমান মজুমদার এবং সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জীবন কুমার, কাউসার মুমিন, সামসুন্নাহার নিম্মি, এম. এ. হাই স্বপন, সোহেল রানা সুমন, স্যামুয়েল স্টিফেন পিনারু, তোফাজ্জল লিটন, হাসান জিলানী, কাজী জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় নাজমুল আহসান বলেন,সাংবাদিকদের সৎ থাকতে হবে। পেশাগত দিকে তাদের অবজেক্টিভ ও ফেয়ার হতে হবে। সাংবাদিকদের স্বাধীনতার চর্চাও করতে হবে। ভয় পেলে চলবে না এবং লোভ সংবরণ করতে হবে। সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করলে ভয়ের কিছু নেই। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সচেতন থাকতে হবে সাংবাদিকতা যেন হাতিয়ার হিসবে ব্যবহার না হয়। যদি তারা কখনও ভুল সংবাদ পরিবেশন করেন, তা দ্রুত শুধরে নিতে হবে।
মুজাহিদ আনসারী বলেন, বাংলাদেশে কালো টাকার মালিকরা তাদের অবৈধ সম্পদ রক্ষায় পত্রিকা বের করে। তারা মিডিয়াকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। মুক্ত সাংবাদিকতার সুফল ভোগ করছে ঐ সকল মালিকরা। সাংবাদিকরা এর সুফল ভোগ করতে পারেন না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টরা সাংবাকিতা এসে সেলফ সেন্সরশিপে সঠিক সাংবাদিকতা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি বলেন, ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ধরনের আইন কালো আইন। এই আইন দ্রুত বাতিল করা হোক।
জাকারিয়া মাসুদ জিকো বলেন, দেশে মিডিয়া কর্মীরা পুরোপুরি স্বাধীন, তা বলা যাবে না। টিভি চ্যানেলগুলোতে আজকাল কী দেখি। একটা শ্রেণী সরকারের প্রসংশা করছে। প্রকৃত সমালোচনা আসছে না। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকলে সেখানে গণতন্ত্রও থাকে না।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, মিডিয়ার স্বাধীনতা চাইলে এই পেশার দায়ি-দায়িত্ব নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এখন আফগানিস্তানের চেয়ে নিচে-এমন সংবাদ আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়।
সৈয়দ ওয়ালী উল আলম বলেন, সাংবাদিকদের প্রধান কাজ হলো গোপন বিষয় বের করে আনা। আর গোপন তথ্য বের করে আনলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্র¯’ হয় ক্ষমতাবানরা। ক্ষমতাবানদের গোপন তথ্য ফাঁস করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের আঘাত করে। তিনি বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিত হলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতাও নিশ্চিত হয়। তিনি বাংলাদেশে সাংবাদিকদের রাজনৈতি প্রভাবে প্রভবিত হবার বিষয় উল্লেখ করে বলেন, আজকাল অদক্ষ ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক স্বার্থবাদীরা সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত হচ্ছেন। এতে এই পেশা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিক নেতাদের বিরোধ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।
জয়নুল আবেদীন বলেন, সাংবাদিকরা সঠিক কথা লিখেই তো সরকারকে এলার্ট করবে। সরকারের ভুলগুলো সাংবাদিকরাই ধরিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে, যা কাম্য নয়। তিনি বলেন-বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে দৈনিক ইত্তেফাক-এর ভূমিকা অনিস্বীকার্য।
শাহাব উদ্দিন সাগর বলেন, শুধু সরকারের দোষ খুঁজলেই হবে না। সাংবাদিকতার মানও দেখতে হবে। সাংবাদিকতার নামে অনেক সময় অপ-সাংবাকিতা হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি বলেন, মিডিয়ার স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সবার আগে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। সাংবাদিকদের শারীরিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করার কথা ভাবতে হবে। সাংবাদিক নেতারা আসলে কী করেন-তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বাংলা৭১নিউজ/এইস/এস