শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
নুরানী বোর্ডের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৮৫.২৫ শতাংশ সচিবালয়ে প্রবেশ পাসের বিশেষ সেল গঠন মাশরাফির জন্য অপেক্ষা করবে সিলেট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হতেই হবে : এম সাখাওয়াত ট্রাইব্যুনালে প্রধান অভিযুক্তদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করলেন মির্জা ফখরুল সিলেটে কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ বিলিয়ন ডলার: গভর্নর আফগান সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১৯ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত সংস্কারের বিষয়ে সরকার একা সিদ্ধান্ত নেবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী রোববার থেকে দক্ষিণ সিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাজ শুরু মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে অভিনেত্রী স্বাগতাকে লিগ্যাল নোটিশ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ৬, সেই বাসচালক গ্রেফতার বিএসএফের বাধার মুখে পড়া মুহুরী নদীর সেই সেচ পাম্প চালু বিএনপি-জামায়াতকে কঠিন হুঁশিয়ারি মামুনুল হকের নিজে নন, শাহিন আফ্রিদির চোখে বাংলাদেশিরাই বড় তারকা লামায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা, বেনজীরের কেয়ারটেকারসহ গ্রেপ্তার ৪

আমেরিকা এক বড় গুয়ান্তানামো, নেই প্রকৃত গণতন্ত্র ও সমান অধিকার: মার্কিন গবেষক

বাংলা ৭১ নিউজ
  • আপলোড সময় শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬
  • ১৪৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: পাশ্চাত্যপন্থীদের কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি স্বর্গরাজ্য বলে মনে করেন। অথচ দেশটিতে নেই প্রকৃত গণতন্ত্র ও সমান অধিকার। বরং রয়েছে দারিদ্র, অর্থনৈতিক বৈষম্য, বর্ণ-বৈষম্য, সহিংসতা, জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি ও আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের দুর্বিসহ সংকট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৯ সন থেকে ২০১৪ সনের মধ্যে তথা ১৫ বছরে আত্মহত্যার হার ২৪ শতাংশ বেড়েছে। মানসিক রোগ, ড্রাগ-আসক্তি ও অর্থনৈতিক মন্দাই এর কারণ বলে দেশটির এক সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মার্কিন নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৪৫ শতাংশ ও পুরুষদের মধ্যে ১৬ শতাংশ বেড়েছে বলে দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি জানিয়েছে। শ্বেতাঙ্গ নারী ও নেটিভ আমেরিকানদের মধ্যে আত্মহত্যার হার খুব বেশি বলে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৩৮ শতাংশ, অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ নারীদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৮৯ শতাংশ।

বেকারত্বের কারণে মধ্যবয়সী মার্কিনীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তাদের অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।

বিশিষ্ট মার্কিন গবেষক, সমালোচক ও লেখক ডক্টর হেনরি জিরুক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বড় গুয়ান্তানামো কারাগারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ পর্যন্ত নানা বিষয়ে তার ৫০টিরও বেশি বই বেরিয়েছে এবং প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ৩০০ প্রবন্ধ।

সম্প্রতি তিনি ‘তথ্যের স্বচ্ছতা আনার ঘরে জাতীয় নিরাপত্তাহীনতার সরকার’ শীর্ষক এক প্রবন্ধ লিখেছেন। জিরুক্স এতে লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জীবন যাপনের মানবীয় নীতিমালা থেকে দূরে সরে এসেছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্যাতন, বর্ণ-বৈষম্য ও সহিংসতার মত বিষয়গুলো অতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

তার মতে, ‘মার্কিন সরকার একটি সামরিক ও পুলিশি সরকার। মার্কিন রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো মিল নেই। বলদর্পি ও আধিপত্যকামী মার্কিন সরকার পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমেরিকানদের জন্য একটি বড় গুয়ান্তানামো কারাগারে রূপান্তরিত করেছেন।

ডক্টর হেনরি জিরুক্স মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলীন হয়ে যাচ্ছে এবং নতুন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে। এই নতুন মডেল প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ১৯৮০ সালের পর থেকে মার্কিন সরকার পরিচালনা করছে একদল অভিজাত ধনকুবের ও কয়েকটি বড় কোম্পানি। এই শক্তিশালী চক্র এমন এক অর্থনৈতিক, সামরিক ও শিক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে তুলছে যা কল্যাণকামী সরকার, প্রাকৃতিক পরিবেশ, যুব সমাজ ও মার্কিন জনগণের স্বার্থকে ধ্বংস করতে চায়। ওরা বর্তমানে এমন এক সমাজ গড়ে তুলেছে যে তা স্বার্থপরতা, সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ব্যক্তিমালিকানাকরণ, বস্তুবাদ-ভোগবাদ ও মুনাফাকামিতা জোরদার করছে।

বর্তমানে ভোগই হয়ে পড়েছে মার্কিন সমাজের একমাত্র দায়িত্ব। অভিজাত ধনকুবের ও পুঁজিবাদী কয়েকটি বড় কোম্পানির শক্তিশালী চক্র অর্থনৈতিক তৎপরতাকে এত ব্যয়বহুল করে তুলেছে যে সাধারণ মার্কিন জনগণের পক্ষে অর্থনৈতিক তৎপরতা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে মার্কিন সমাজে বাড়ছে বৈষম্য ও বেকারত্বসহ নানা সংকট। আমেরিকায় ধনী ও দরিদ্রের আয়ের ব্যবধান এতই বাড়ছে যে দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার সমান সম্পদ রয়েছে মাত্র ৪০০ ধনী পরিবারের কাছে!

ডক্টর হেনরি জিরুক্স বলেছেন, আমেরিকার ক্ষমতাসীন শক্তিশালী পুঁজিবাদী চক্র মার্কিন যুবকদের জন্য কম খরচে পড়াশুনার যে সুযোগ ছিল তা বিলুপ্ত করছে এবং তারা মার্কিন যুব সমাজ, দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে। মার্কিন সরকারই জনগণের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম কারাগার গড়ে তুলেছে। আমেরিকার ঘরোয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংকটাপন্ন না হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন পুলিশ জনগণের সঙ্গে এমন আচরণ করছে যেন তারা তথা এই সাধারণ জনগণই দেশের শত্রু! এইসব বিষয়ের আলোকে ডক্টর হেনরি জিরুক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি ব্যর্থ-রাষ্ট্র বা দেউলিয়া রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থনৈতিক কাঠামোয় সংস্কার আনা, দারিদ্র, অবিচার ও বর্ণবৈষম্য দূর করার ওয়াদা দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জিরুক্সের অভিমত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা আমেরিকার ক্ষমতাসীন শক্তিশালী পুঁজিবাদী চক্রেরই মদদপুষ্ট প্রার্থী। আমেরিকার দুই প্রধান দলের কোনো প্রার্থীই দেশের সংকটগুলোর সমাধান করতে চান না। তবে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প যদি জয়ী হন তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে। জিরুক্স মনে করেন ক্ষমতা, আয়-উপার্জন ও সম্পদের ক্ষেত্রে অবিচার আর বৈষম্য আমেরিকায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

ডক্টর জিরুক্সের মতে, সহিংসতা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির একটি অপরিহার্য অংশ। সহিংসতাকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ-ভিত্তিক। একদল জাতীয়তাবাদী ও চরমপন্থী স্বতন্ত্রতাবাদী এই মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করছে। একদল শিল্পপতি ও সামরিক কারখানার মালিক নিয়ন্ত্রণ করছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি। বিশ্বে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয় বরং যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়া ও সেনা সমাবেশই তাদের লক্ষ্য।

বিশিষ্ট মার্কিন গবেষক, সমালোচক ও লেখক ডক্টর হেনরি জিরুক্স মনে করেন ক্ষমতাসীন মার্কিন মোড়লরা ঘরোয়া সংকটগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার কাজেও সহিংসতাকে ব্যবহার করছেন। অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান সংকটের সমাধান না করে তারা দরিদ্র ও কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে এবং গৃহহীন ও হত-দরিদ্রদের কারাগারে পাঠাচ্ছে।

আর যারা এই নীতির বিরোধিতা করছে তাদের সঙ্গে অত্যন্ত নৃশংস আচরণ করছে। শিক্ষা ও গৃহায়ন খাতসহ সমাজকল্যাণমূলক নানা খাতে অর্থ ব্যয় না করে মার্কিন সরকার এখন কারাগারগুলোর সংখ্যা ও কারাকক্ষের সংখ্যা বৃদ্ধিতে পুঁজি বিনিয়োগ করছে! ডক্টর জিরুক্স আরও বলেছেন, মার্কিন সরকার কেবল ঘাটতি বাজেটেরই শিকার নয় গণতন্ত্র ও নৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও ঘাটতির শিকার।

অন্য কথায়, তার মতে মার্কিন সমাজকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে তা স্বৈরতান্ত্রিক। দেশটির অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে জনসংখ্যার কেবল এক শতাংশ মানুষ। মার্কিন নির্বাচন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থা- এসবই একটি পুঁজিপতি গোষ্ঠীর হাতের মুঠোয় রয়েছে। বাদবাকি ৯৯ শতাংশ মার্কিন নাগরিক প্রাত্যহিক জীবনের খুব সামান্য অংশের ওপরই প্রভাব রাখেন অথবা মোটেই প্রভাব রাখেন না।

মার্কিন চিন্তাবিদ ডক্টর হেনরি জিরুক্স মনে করেন দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতা আমেরিকার হর্তা-কর্তা হয়ে থাকা ১ শতাংশকে শেষ করে দিতে পারে। তাই তারা দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতাকে ধ্বংস করছেন। অতীতে মার্কিন সমাজে ন্যায়বিচারকামী নীতি প্রয়োগের চিন্তাভাবনা দেখা যেত। কিন্তু এখন গণতন্ত্র না থাকায় দারিদ্র বিমোচন ও ন্যায়বিচারের শ্লোগানও চিরতরে শেষ হয়ে গেছে।

তার মতে ১১ সেপ্টেম্বরের রহস্যময় হামলার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহিংসতা ও আতঙ্কের দেশে পরিণত করা হয়েছে এবং দেশটির সরকার জনকল্যাণের পরিবর্তে গোটা দেশকে বড় গুয়ান্তানামোয় রূপান্তরিত করেছে। মার্কিন সরকার ওই ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে খরচ করেছে চার ট্রিলিয়ন ডলার। দেশটির সরকার পরিণত হয়েছে পুলিশি সরকারে। জনগণের স্বাধীনতা হয়েছে সীমিত।

একই প্রসঙ্গে ডক্টর হেনরি জিরুক্স আরও বলেছেন, আইনের শাসন না থাকায় এখন আমেরিকায় নরহত্যা করা যায় খুব সহজেই। আড়ি পাতা যায় মার্কিন নাগরিকদের কথাবার্তা শুনতে। সরকার অবৈধ নির্যাতনকেও সমর্থন দিচ্ছে। ভেতর ও বাইরের সব সংকটকে সহিংসতার মাধ্যমে মোকাবেলা করছে মার্কিন সরকার। কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা এই সরকার ভাবতেই পারে না।

এ সরকারের ডিএনএ-তে মজ্জাগত হয়ে আছে সহিংসতা। কেবল তাই নয়, সহিংসতা যেন গোটা আমেরিকায় জাতীয় বিনোদনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। তাই প্রায়ই এখানে সেখানে গোলাগুলি হচ্ছে ও মরছে নিরীহ মার্কিন নাগরিক। মার্কিন সমাজ কট্টর চরমপন্থার এক নতুন অধ্যায়ের জন্ম দিচ্ছে।

বাংলা৭১নিউজ/পার্সটুডে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরও সংবাদ
২০১৫-২০২৪ © বাংলা৭১নিউজ.কম কর্তৃক সকল অধিকার সংরক্ষিত।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com