রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ১০৮০ কোটি ২২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৬ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয়েছে।
শনিবার (২৬ জুন) দুপুরে নগর ভবনের সিটি হলরুমে আয়োজিত এক জরুরি সাধারণ সভায় এ বাজেট অনুমোদন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
রাসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৯৬ কোটি ৭৯ লাখ ৩ হাজার ৩২৯ টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৫৬১ কোটি ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৭ টাকা।
বাজেট সভায় রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় ৯টি অগ্রাধিকার কর্মকৌশল ঠিক করেছি। সেগুলো হচ্ছে, পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে রুট পর্যায়ে নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সবুজায়ন-পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ ও অপ্রচলিত আয়ের খাত সন্ধানের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি। এছাড়া রয়েছে আরও বিভিন্ন কর্মকৌশল।
মেয়র আরো বলেন, এরইমধ্যে আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে বুধপাড়া পূর্ব-পশ্চিমমুখী ৬ কিলোমিটার চার লেন সংযোগ সড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কটি ৩০-৮০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। সড়কটি দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে। এছাড়া উপশহর মোড় থেকে সোনাদিঘী মোড় ও মালোপাড়া মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সংলগ্ন পবা উপজেলাধীন হারুপুর মৌজায় স্বল্প ও মধ্যম আয়ের লোকদের জন্য ‘গৃহায়ন পদ্মা’ এবং ছোটবন গ্রামে ছয়টি আধুনিক আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে। উপশহরে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন।
চলমান ও নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে মেয়র বলেন, মহানগরীর সমন্বিত ‘নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ১৬৪ কোটি ১৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ডসমূহে সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন কার্পেটিং দেয়ার কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে।
এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়াও নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ ও পানি নিষ্কাশনে নর্দমার নির্মাণকাজও প্রায় সমাপ্ত হয়েছে।
সিটি মেয়র জানান, পাঁচটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হযরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সমাধিসৌধ নির্মাণপ্রকল্প ও ১১৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতি জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটির সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ৯৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন’ ও ৭১১ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণপ্রকল্প প্রণায়নাধীন।
মেয়র বলেন, পরিবেশের উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন অর্থবছরে আরও ৫০ হাজারের অধিক গাছের চারারোপণ করা হবে। নওদাপাড়া শিশু পার্কের সামনে চারবিঘা জায়গায় রাসিকের নিজস্ব নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রামেক হাসপাতাল ও সব ক্লিনিকের আউটহাউস মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পাঁচটি আধুনিক এসটিএস নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এবং আরও ছয়টি এসটিএস নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। ফগার মেশিনে কিটনাশক স্প্রে ও লার্ভিসাইড ব্যবহারের কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, আলোকায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিকেএসপি প্রতিষ্ঠাসহ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়ন, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা, লালনশাহ পার্কসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রের উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে।
সভায় রাসিক মেয়র বলেন, ‘অদৃশ্য ভাইরাস মোকাবিলা করে আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। করোনা সঙ্কটের এ মুহূর্তে জাতীয় বাজেটের আলোকে রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়ন ও নাগরিকসেবা বৃদ্ধিতে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বাংলা৭১নিউজ/সিএফ