দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ‘লা মেরিডিয়ান হোটেল’র মালিক আমিন আহমেদকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন আমিন আহমেদ। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজারের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাতের প্রায় ৯৫ কোটি টাকা গোপন করার চেষ্টা ও সাড়ে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে।
গণমাধ্যমকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সুমন ভুঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিপক্ষে এহসানুল হক সমাজী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি আব্দুর রহমান হাওলাদার, সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মামুন, ইকরামুল কবির রোমেল প্রমুখ আইনজীবী শুনানি করেন।
দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এই মামলায় গত ৫ জুন আমিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের সহকারী পরিচালক নেয়ামুল হাসান গাজী। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ ছাবিদ হাই অনিক।
জানা যায়, বাগেরহাট-১ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। আওয়ামী লীগ সরকার এবার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি।
সেই মেয়াদের শেষ দিকে ২০১২ সালের ৮ আগস্ট তিনি বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের সঙ্গে গুলশান সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অধীন ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকার লালসরাইস্থিত মৌজার ৬ নং প্লটের ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা ভূমি ক্রয়ের জন্য সমঝোতা চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন। চুক্তি অনুযায়ী মূল্য ধরা হয় ১১০ কোটি টাকা।
পরে চুক্তিপত্র অনুযায়ী ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর দুটি দলিল মোতাবেক ভূমির দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ৮০৮৮৫ নং দলিলে ১৮ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি হয়। যার মূল্য ধরা হয় ৯ কোটি টাকা। এই দলিলের গ্রহীতারা হলেন শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না ও স্ত্রী মিসেস শিরিন আক্তার।
অপরদিকে ৮০৮৮৬ নং দলিলে ১২ দশমিক ২৫ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মূল্য ধরা হয় ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এই দলিলের গ্রহীতা আব্দুল হাই বাচ্চুর দুই ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। তাই দুটি দলিলে জমির মোট রেজিস্ট্রেশন মূল্য দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
অথচ জমি ক্রয় বাবদ আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে সর্বমোট ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং নগদে ৩১ কোটি ৫০ লাখ, অর্থাৎ মোট ১১০ কোটি টাকা আসামি আমিন আহমেদ-এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। যা আসামি আমিন আহমেদ বুঝে পেয়েছেন মর্মে স্বীকার করেন।
এর মাধ্যমে আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু তার স্ত্রী, ভাই ও সন্তানদের নামে ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর, ছদ্মাবরণের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অর্থ গোপন করেছেন। আর ১১০ কোটি টাকায় ক্রয় করা সত্ত্বেও ১৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় দলিল করে আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু সরকারের ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। আসামি আমিন আহমেদ আসামি শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর অবৈধ অর্থ বৈধতা প্রদানে সরাসরি সহায়তা করেছেন।
এর মাধ্যমে আসামিরা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ