বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হচ্ছে আজ। প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে দৈনিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। তবে কোনো কোনো স্থানে তা দৈনিক দেড় থেকে দুই ঘণ্টাও হতে পারে। তবে শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের লোড রেশনিং করা হবে না।
ডলার সংকটের মোকাবিলা ও আমদানি খরচ কমানোর অংশ হিসেবে ডিজেলভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে মসজিদসহ সব ধরনের উপাসনালয়ে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনুরোধ করা হয়েছে নামাজের সময় বাদে অন্য সময় এসি ব্যবহার না করতে। রাত ৮টার পর সব দোকানপাট এবং মার্কেট বন্ধ রাখতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ , জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক সমন্বয় সভাশেষে গতকাল দুপুরে উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী যৌথভাবে সংবাদ ব্রিফিং করেন। পরে বিকালে সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রী আলাদাভাবে ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও লোডশেডিং বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নানা তথ্য ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ
ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। ইউক্রেনের যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধ কিন্তু আমাদেরও যুদ্ধ। ঐ যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে আমাদের ওপর। খরচ কমাতে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আজ (গতকাল) থেকে সাময়িক বন্ধ থাকবে। এ সিদ্ধান্ত সাময়িক।
বিশ্ব পরিস্থিতির উত্তরণ হলে আগের অবস্থানে ফিরে আসা হবে। তিনি বলেন, যাদের অর্থের অভাব নেই, তারাও কিন্তু লোডশেডিং করছে। যুক্তরাজ্যে হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় হচ্ছে। উৎপাদনকে কমিয়ে খরচ যাতে সহনশীল হয়, সে পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ডিজেলের বিদু্যত্ উৎপাদন আপাতত স্থগিত করলাম, তাতে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। মনে রাখতে হবে, ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে বিদু্যত্ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে যে পরিমাণ ডিজেল আমদানি হয়, তার ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ ব্যবহার হয় অন্য খাতে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে। বিদ্যুৎ থেকে ১০ ভাগ এবং অন্য দিক থেকে আরো ১০ ভাগ ডিজেল খরচ কমানো গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে। তিনি বলেন, এখন ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ টাকা। কিন্তু আমরা বিক্রি করে এই অর্থ পাচ্ছি না।
শিল্প ছাড়া সব খাতে লোডশেডিং
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ধারণা—সামনে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং কোনো কোনো জায়গায় দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে, তা আগে থেকে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি শিল্প খাতকে। শিল্প উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য অন্য খাতে রেশনিং করা হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহে এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়া হবে। পরে পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
মসজিদে এসি বন্ধ রাখার সংবাদ বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু মসজিদ নয়, সব উপাসনালয়ে প্রচুর এসি লাগানো হয়েছে। প্রার্থনার সময় বা নামাজের সময় তারা যেন মিতব্যয়ী হয়ে এসি চালান। প্রার্থনা শেষ হলে তারা যেন এসি সময় মতো বন্ধ করেন, আমার সাজেশন এটাই থাকবে। আমাদের এভাবেই আলোচনা হয়েছে।
এদিকে গতকাল ঢাকার একাংশ এবং নারায়ণগঞ্জের একাংশে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এলাকাভিত্তিক একটি তালিকা প্রকাশ করে। তবে পরে সন্ধ্যায় তারা জানায় তাদের এলাকায় ‘এই মুহূর্তে’ লোডশেডিং নেই। লোড কম বরাদ্দ পেলে লোডশেডিং হতে পারে। সেজন্য সময়ে সময়ে তাদের ওয়েবসাইট ভিজিটের অনুরোধ জানায় ডিপিডিসি। তবে ডিপিডিসি ছাড়া ঢাকাসহ সারা দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত অন্য পাঁচটি সংস্থা-কোম্পানি এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি।
পেট্রোল পাম্প বন্ধের বিষয়ে
দুপুরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কীভাবে, কোন পদ্ধতিতে বন্ধ রাখা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। বন্দর এলাকায় সপ্তাহে দুই দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, পেট্রোল পাম্প সপ্তাহে এক দিন বন্ধ রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিপিসি পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
অফিস সময় ও অনলাইনে সভা
দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস জানান, সরকারি অফিসগুলোতে কীভাবে সময় কমিয়ে আনা যায় সেটা ভাবা হচ্ছে। সরকারি অফিসগুলো এবং বিভিন্ন সভা ভাচুর্য়াল পরিচালনার বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সমন্বয় করবে। পরে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। অফিস টাইম কমানো, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, অফিস ভবনে বিদ্যুৎ খরচ সীমিত করা হবে। এ মাসের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ