বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: শেয়ারের যোগ্য দাম না পাওয়ায় স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের খোঁজে গত বছর তৃতীয় দফায় টেন্ডার আহবান করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এতে দু’টি কনসোর্টিয়াম আবেদন করে। একটি হচ্ছে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সেনজেন ও সাংহাই।
চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর বোর্ড এ প্রস্তাব দু’টি যাচাই-বাছাই করে। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি কারণে ডিএসই’র বোর্ড সবার সম্মতিতে চীনা কনসোর্টিয়ামকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে অনুমোদন দেয়।
চীনা কনসোর্টিয়ামকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দেখানো হয়েছে- শেয়ার প্রতি ২২ টাকা দর প্রস্তাব, আইটি খাতের জন্য আলাদা বিনিয়োগের পাশাপাশি বিনামূল্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান, দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ, পরিচালক হিসেবে একজন প্রতিনিধি প্রস্তাব এবং ১১ হাজার বিদেশি বিয়োগকারীর সম্ভাবনা।
এ প্রস্তাব আজ সোমবার ডিএসই’র বোর্ড সভার পর বাংলাদেশ সিকউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসই’র একাধিক পরিচালক বলেন, চীনা কোম্পানির প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য, পরিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক মানের। তাই সবদিক বিবেচনা করেই চীনা কনসোর্টিয়ামকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, চীনা দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর শেয়ার কিনলে দেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়বে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশীয় পুঁজিবাজারের মর্যাদা বাড়বে।
ডিএসইর তথ্য মতে, চীনা কনসোর্টিয়াম কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই দীর্ঘ মেয়াদে ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় আসতে চায়। তারা শেয়ার প্রতি ২২ টাকা দরে ডিএসইর ৯৯২ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭৫০ টাকার শেয়ার কেনার প্রস্তাব করেছে।
অপরদিকে ভারতীয় কনসোর্টিয়াম ১৫ টাকা দরে মাত্র পাঁচ বছরে জন্য শেয়ার কিনতে চায়, যার মূল্য ৬৭৬ কোটি ৬৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৫ টাকা। এরপর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে এসব
এসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডিএসইর এমডি-চেয়ারম্যান ও দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। যেকোনো মূল্যে তারা ডিএসইর শেয়ার কিনতে চান বলে জানানো হয়।
প্রথম দফায় ডিএসই’র এমডি ও চেয়ারম্যান রাজি না হওয়ায়, বিএসইসি’র মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করেন। এতে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ডিএসইর এমডি ও চেয়ারম্যানকে তলব করেন।
বৈঠকে ডিএসই’র এমডিকে বিভিন্ন ভাষায় গালি ও কটুক্তি করেন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন এবং ভারতের প্রস্তাবটি বিবেচানার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সেটিও প্রত্যাখান করেন ডিএসই’র এমডি।
১৩ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান এবং ডিএসইর আরেক সদস্যকে কমিশনে ডাকেন। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক শেষে তাদেরকে চীন ও ভারতের মধ্যে শেয়ার ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। কারণ হিসেবে সরকারের উচ্চমহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। কিন্তু ডিএসই পরিচালক তার দাবিতে অনড় থাকেন।
ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী বাছাইয়ের পর কমিশনের এই অযথাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। এর প্রেক্ষিতে বিএসইসিও প্রতিবাদ জানায়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার জন্য ‘ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট-২০১৩’ গঠন করা হয়। এতে কৌশলগত অংশীদারদের ২৫ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়। আর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো বা ব্রোকারেজ মালিকরা স্টক এক্সচেঞ্জের ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানায় থাকবেন। বাকি ৩৫ শতাংশ শেয়ার পরবর্তীতে আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে হবে।
পরবর্তী সময়ে কৌশলগত বিনিয়োগকারী নেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে ১ বছর সময় দিয়ে চিঠি ইস্যু করে বিএসইসি। পরে ৬ মাস করে আরও দুই দফায় সময় বাড়িয়েছে কমিশন, যা আগামী মার্চ মাসের ৮ তারিখ শেষ হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসকে