সার্কিট ব্রেকারের (সিকিউরিটিজের দাম বাড়া বা কমার সর্বোচ্চ সীমা) নতুন নিয়ম চালু করার পর দেশের শেয়ারবাজারে টানা বড় উত্থান প্রবণতা দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের মতো বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুতেই সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেইসঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেনেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স একশ’ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় তিনশ’ প্রতিষ্ঠান। আর লেনদেন হয়েছে প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পাশাপাশি অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের বড় উত্থান দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।
এর আগে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে গত মঙ্গলবার সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই নিয়মের ফলে এখন থেকে একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়ম চালুর পর বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ১৫৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারির পর একদিনে সূচকটির এতো বড় উত্থান আর দেখা যায়নি।
সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার পাশাপাশি বুধবার বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়বে।
এ বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গনমাধ্যমকে জানান, বৈঠকে তিনটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে যে সব ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার নিচে রয়েছে, তারা কয়েকদিনের মধ্যে ২ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।
এছাড়া এক্সপোজারের বাহিরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য যে সব ব্যাংক এখনো ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেনি তারা দ্রুত এই তহবিল গঠন করবে এবং যারা গঠন করেছে সবাই মিলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য যতটুকু বিনিয়োগ করা দরকার, সবাই সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে।
এর সঙ্গে বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, অতিরিক্ত টায়ার-১ এবং টায়ার-২ এর জন্য যেসব ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করবে, সেগুলো সুপারফাস্ট প্রসেস করে দেওয়া হবে। এছাড়া ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর জন্য অন্য যেসব জড়িত সে বিষয়ে কমিশন সার্বিক সহযোগিতা করবে।
বিএসইসি থেকে এমন ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০ পয়েন্টের ওপরে বেড়ে যায়।
লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই বড় উত্থান সময়ের সঙ্গে আরও বেড়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ১১০ পয়েন্ট বেড়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৮ পয়েন্ট। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়েছে।
এ সময় পর্যন্ত ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩১৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮টির। আর ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৫ পয়েন্ট বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১২১ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৯৬টির, কমেছে ১৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ