বাংলা৭১নিউজ, ঢাকা: আইন লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানতে ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন সীমায় প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে দেড় শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এক শতাংশ কমানো হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। একশ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকগুলো এতদিন ৮৫ টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারত। নতুন সীমা অনুযায়ী, এখন ঋণ বিতরণ করতে পারবে ৮৩ টাকা ৫০ পয়সা। ইসলামী ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারবে ৮৯ টাকা। এতদিন ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯০ টাকা ঋণ দিতে পারত।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোর দ্বি-সাপ্তাহিক গড় ভিত্তিতে রক্ষিতব্য সিআরআর এবং দৈনিক ভিত্তিতে রক্ষিতব্য এসএলআর বাদে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল দাঁড়ায় ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা ইসলামী শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক এবং প্রচলিত ধারার ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য ৮৮ শতাংশ।
তবে মূলধন ভিত্তি, তারল্য পরিস্থিতি, আন্তঃব্যাংক নির্ভরশীলতা সর্বোপরি এলসিআর ও এনএসএফআর সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ উল্লিখিত হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ (ইসলামী ব্যাংকের জন্য ২ শতাংশ) যোগ করে এডিআর (আইডিআর) এর সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যাংকগুলো ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত সীমা ৯০ শতাংশ। এখন থেকে এটি কমিয়ে প্রচলিত ব্যাংকের জন্য সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
যেসব ব্যাংকের এ সীমা বেশি মাত্রায় রয়েছে তা আগামী জুন মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একটি পরিকল্পনা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অর্জনের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে এডিআর।
তিনি বলেন, এডিআর সীমা কমানোর ফলে ঋণ বিতরণের সক্ষমতা কমে যাবে। আমানত না বাড়ালে অনেকে ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। সংশোধিত সীমার কারণে অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করতে হবে অথবা আনুপাতিক হারে ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। নির্বাচনী বছরে অর্থের চাহিদা থাকবে। তাই আমাদের দাবি ছয় মাসের পরিবর্তে আগামী ১ বছরের মধ্যে এ সীমার মধ্যে আসার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির হার ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত সোমবার ঘোষিত মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছে।
মুদ্রানীতি ঘোষণার আগের দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এটা নির্বাচনের বছর, টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি হবে, কালো টাকাও আসবে। এজন্য ঋণ বিতরণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসকেবি