বাংলা৭১নিউজ, ডেস্ক: নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকিংয়ের আগেই ফেডারেল রিজার্ভের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এ ধরনের হামলার আশঙ্কা করেছিলেন।
কিন্তু পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার এ খবর দিয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে বিদেশি কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শিথিল নিরাপত্তা প্রক্রিয়া এবং সেকেলে প্রযুক্তির দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা স্থানীয় ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাক করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাউন্টে হানা দিতে পারে।
এ আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানতে পেরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) কর্মকর্তারা সুইফট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এ ধরনের সাইবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন। ‘নিউইয়র্ক ফেডারেল বহু ঝুঁকির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এর অন্যতম ছিল সুইফট,’ বলছিলেন একজন সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা।
তবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিরাপত্তা সম্পদকে অন্য অগ্রাধিকারের কাজে ব্যবহার করা হয়। এর অন্যতম ছিল মুদ্রা পাচার বা মানি লন্ডারিং রোধ এবং বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা।
ব্যাংকটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন যে তারা এই ভেবে স্বস্তিতে ছিলেন যে সুইফট সিস্টেম কখনো লঙ্ঘন হয়নি।
ফেডারেল রিজার্ভের এই হ্যাকিংয়ের ঘটনায় বাংলাদেশ হারিয়েছে কয়েক শ’ কোটি টাকা। মামলার ঝুঁকিতে আছে ব্যাংকটি। এই হ্যাংকিয়ের ঘটনায় এটাই বোঝা গেল যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি বিশ্ব অর্থনীতির নেটওয়ার্কে সম্ভাব্য সিস্টেমিক ঝুঁকি বুঝতে পেরেও এটা রোধ করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তবে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ফেডারেল রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হলেও হ্যাকারা প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল।
সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে এই হ্যাকিংয়ের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ব্যাংকিং শিল্পে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিশ্বের প্রায় ১১,০০০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর্থিক লেনদেনে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ২০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রয়েছে।
‘এখন সবাই যেটা বুঝতে পারছে তা হচ্ছে এর আগে কেউই এই ঝুঁকি সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারেনি,’ বলছিলেন ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ এবং সুইফটের দায় নিয়ে চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ডুডলে এবং সুইফটের একজন সিনিয়র নির্বাহীর সাথে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বিশ্বের বহু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল মজুদ আছে। প্রতিদিন ব্যাংকটি প্রায় ৮০০০ কোটি ডলার লেনদেন করে।
এর বেশিরভাগ লেনদেনই স্বয়ংক্রিয়। তবে প্রতিদিন ২০০০ এর মত লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এমএস