মাত্র ছয় শতাংশ জায়গায় তিনটি টিনের বাড়ি। বাড়িগুলোতে বাস করতেন নরেশ (৪২), আমল (৩৫) এবং জয় তির্গা (২২)। সবার মতো গতকাল বুধবার রাতে নরেশের স্ত্রী সীতাবাল, ছেলে তুশার, তাপসকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। হঠাৎ রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ছোট শিশুটি ভয়ে কেঁদে ওঠে।
তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী সবাই এগিয়ে আসার আগেই নরেশের সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ঘটনাটি দিনাজপুর বিরামপুর উপজেলার চৌঘুরিয়া গ্রামের। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকের বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে বিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই স্থানীয় প্রসাশন এসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনো খাবার, কিছু নগদ অর্থসহায়তা করেন। স্থানীয় ২ নম্বর কাটলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যন ইউনুস আলী বিয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, উৎসুক জনতা পোড়া বাড়িগুলো দেখতে ভিড় করছেন। বাড়ির কিছু অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। সব টিন, তিনটি গরু, ঘরের চাল, ডাল, বেশ কয়েকটি মুরগি, হাঁস, লেপ-তোশক সব পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পাশের বাড়িগুলোতে অবস্থান নিয়ে বিলাপ করে কান্না করছেন। উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওয়তায় বেশ কিছু শুকনো খাবার এবং কিছু নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
কাঁদো কাঁদো গলায় শিশু তাপস তির্গা বলেন, রাতে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ টিনের ওপর আগুন দেখে চিৎকার শুরু করি। পরে বাবা-মা উঠে আমাদের বারান্দা থেকে নিয়ে যায়। এই অল্প সময়ে মধ্যে নিজেরা বাঁচতে গিয়ে ঘরে থাকা গরুগুলো পুড়ে গেছে।
জানতে চাইলে শীতা বালা বলেন, আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার ছেলে বললো, ওঠো, আগুন লেগেছে। পরে প্রতিবেশী সেকেন্দারকে ডাকাডাকি করি। স্থানীয়রা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই সবপুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী সুলতান আহম্মেদ বলেন, আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আমরা প্রতিবেশীরা অনেকটা অসহায় ছিলাম। স্থানীয় চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিভাগকে অবগত করেন। আগুন নেভানোর কাজে লেগে পড়েন স্থানীয়রা। ততক্ষণে নরেশ, অমল আর জয়ের স্বপ্নপুড়ে ছাই হয়েগেছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান ইউনুস আলী জানান, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে আগুনের বিষয়টি অবগত করি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিছু শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রদান করা হয়েছে।
বিরামপুর ফায়ার সার্ভিসের লিডার জহুরুল ইসলাম জানান, আগুনের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। তিনটি পরিবারের প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএম