লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া গ্রামের কৃষক নজির আহমেদ ৪২ শতাংশ জমিতে আখ (ইক্ষু) চাখ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। আখের ফলনও ভালো হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, পুরো তিনলাখ টাকাই লোকসান হয়েছে তার। আর পরিশ্রম গেল বৃথা৷ জলে গেল তার স্বপ্ন।
নজির আহমেদের আখ ক্ষেতটি বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। আখ মরে না গেলেও দীর্ঘদিন পানিতে থাকায় দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। যা খাবারের অনুপযোগী।
মান্দারী ইউনিয়নের যাদৈয়া এবং মোহাম্মদ নগর গ্রামের বিস্তৃর্ণ জমিতে আখ চাষ হয়। লাভবান হয় কৃষকেরা। কিন্তু এবার লাভের বদলে অথৈ জলের তলে ডুবে রয়েছে তাদের ক্ষেত। এতে ওই এলাকার অন্তত ২০ জন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সহায়সম্বল হারিয়েছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যাদৈয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আখচাষি নজির আহমেদ সাঁতার কেটে ক্ষেত থেকে আখ তুলেছেন। কলাগাছের ভেলা চাপিয়ে সংগৃহীত আখগুলো রাস্তার পাশে নিয়ে আসেন। এ সময় আখের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ চাষি।
তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা দিছে, আবার নিয়েও গেছে। আখের ফলন ভাল হয়েছে। একেকটা আখ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এ আখ এখন কেউ খাবে না। পানিপচা গন্ধ ছড়াচ্ছে। বন্যা আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ৪২ শতাংশ জমিতে তিন লাখ টাকা খরচ করে চাষাবাদ করেছি। যে ফলন হয়েছে, চার লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু সব পানিতে পচে গেছে। আমার মতো এ এলাকার অনেক আখচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একই এলাকার আখচাষি সফি উল্যা জানান, আখ চাষে তার দুই লাখ টকার মতো খরচ হয়েছে। এক টাকার আখও বিক্রি করতে পারেননি। বন্যার পানি আখ ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়েছে।
যাদৈয়া এবং মোহাম্মদ নগর গ্রামের আখ চাষি আবু তাহের, আহম্মেদ উল্যা ও কালু মিয়ার চিত্র একই। এবার তারা আখচাষ করে বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তাদের এলাকার সব আখক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার অন্তত ২০ জন চাষি আখ চাষাবাদ করে। প্রতি মৌসুমে চাষাবাদ খরচ বাদ দিয়ে তারা লাভবান হতো। তা দিয়ে সংসার চলতো। কিন্তু বন্যার কবলে পড়ে আখচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা তাদের চাষাবাদের সম্বল হারিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ