বাংলা৭১নিউজ, মোঃ মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদামের বাহিরে খোলা আকাশের নীচে রাখা সার রোদে ও বৃষ্টিতে ভিজে জমাট হয়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সার। এছাড়াও খোলা আকাশের নীচে রাখা বৃষ্টিতে ভেজা সারের পানিতে নষ্ট হচ্ছে বাফার সার গুদামের আশপাশ এলাকার ক্ষেত। মরে যাচ্ছে পুকুর এবং জ্বলাশয়ের মাছ ও গাছপালা।
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বিসি আই সির সান্তাহার বাফার সার গুদাম থেকে নওগাঁ জেলার রানীনগর, বদলগাছি, মহাদেবপুর, সাপাহার, নিয়ামতপুর, পোরশা, মান্দা, পতœীতলা, ধামইরহাট ও আত্রাই উপজেলাসহ কয়েকটি জেলা ও উপজেলার বিসিআইসির সার ডিলারেরা সার উত্তোলন করে থাকে। এগুদামে চাহিদার তুলনায় হাজার হাজার টন সার মজুদ রয়েছে বেশী বলে জানা গেছে। গুদামে ধারন ক্ষমতা প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিকটন। কিন্ত বর্তমানে ২৮ হাজার মেট্রিকটনরও বেশী গুদামে মজুদ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়। এছারাও গুদামে জায়গা না থাকায় কোটি কোটি টাকা মূল্যের হাজার হাজার বস্তা সার খোলা আকাশের নীচে মজুদ রাখা হয়েছে। ফলে একদিকে রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে এসব সার। অন্যদিকে খোলা আকাশের নীচে মজুদ সারের গলা পানিতে নষ্ট হচ্ছে বাফার সার গুদামের আশপাশ এলাকার ক্ষেত। মরে যাচ্ছে পুকুর এবং জ্বলাশয়ের মাছ ও গাছপালা।
গুদামের প্রায় ৩০টির মত এন্ট্রিকড়ই গাছসহ এলাকায় বিভিন্ন জাতের গাছ মরে গাছে। এছারাও মারাত্বকভাবে ক্ষতির সূম্মখীন এলাকার পরিবেশ। খোলা জায়গার মজুদ সারের গন্ধে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ক্ষতির সূম্মুখীন হচ্ছে এলাকাবাসী। এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নীচে পরে থাকা এসব জমাট বাধা সার জমিতে প্রয়োগ করে কৃষকরা কোন ফল পাচ্ছেনা। স্থানীয় কৃষক এবং বিসিআইসির অনুমোদিত সার ডিলারদের অভিযোগে জানা যায় চাহিদা বা গুদামে ধারন ক্ষমতার তুলনায় মজুদ করা রাখা হয় বেশি। গুদামে ধারন ক্ষমতা না থাকায় খোলা আকাশের নীচে মজুদ রাখা হয়েছে হাজার হাজার বস্তা সার।
দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নীচে মজুদ করে রাখা সারগুলো রোদ বৃষ্টির পানিতে ভেজে জমাট বেঁধে ওজনে কম ও পাথরের মত শক্ত হয়ে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের হাজার হাজার বস্তা সার। খোলা আকাশের নীচে রাখা রোদ বৃষ্টিতে ভেজা সার কৃষকরা জমিতে প্রয়োগ করে ফল না পাওয়ায় এসব নিম্নমানের সার ক্রয় করছেনা কৃষকরা। এ কারনে এসব সার উত্তোলন করে ডিলারদের লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হয়। ফলে বিসিআইসির অনেক ডিলার সান্তাহার বাফার গুদাম থেকে সার উত্তোলন না করে অন্য বাফার গুদাম থেকে সার উত্তোলন করছে। একরনে সান্তাহার বাফার গুদামের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সার ডিলার জানান, চাহিদার তুলনায় অহেতুক মজুদ করে খোলা আকাশের নীচে রাখায় সরকারের কোটি কোটি টাকার সার নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে গুদামের বাহিরে মজুদ রাখা সার কৃষকরা প্রয়োগ করে ফলন না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাই তারা এই সব সার ক্রয় না করায় আমরা লোকসানে পড়ছি।
তারা আরোও জানান, গুদাম থেকে সার উত্তলোনের সময় ভালো সারের সাথে এখন খোলা আকাশের নীচে রাখা জমাট বাধা পাথরেরমত শক্তি সার খোয়া ভাঙ্গা মেশিন দিয়ে ড্যাষ্ট করা গুড়া করা সার নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কোন ডিলার জোমাট বাধা সার নিতে আপত্তি জানালে ট্রাক প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিলে ভাল সার দিয়ে থাকে। তা না দিলে বাহিরের মজুদ সার নিতে বাধ্য করা হয়।
সান্তাহার শহর পার্শ্ববর্তী সান্দিড়া গ্রামের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী, মুক্তিযোদ্ধা আঙ্গুঁরসহ আরোও অনেকে জানান, খোলা আকাঁশের নীচে মজুদ সারের ধোওয়ানীর পানি প্রবেশ করে বাফার গুদামের আশপাশ এলাকার ক্ষেত পুড়ে যায়। পুকুরের মাছ এবং গাছপালা মরে যাচ্ছে ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
এসব তথ্য সংগ্রহের জন্য গুদাম ইনচার্জের সাথে কথা বলার জন্য অফিসে যেতে চাইলে গার্ড বাধা দেন। কেন যেতে দিবেন না জানতে চাইলে বলেন, সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি নেই। এ বিষয়ে বাফার ইনর্চাজ আব্দুল মালেকের সাথে মোবাইলে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস