দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় ইনহেলেশনাল অ্যানেস্থেটিক হিসেবে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন বা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
অস্ত্রোপচার কক্ষে রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার করা হয় হ্যালোথেন। আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেনও রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার হয়।
সম্প্রতি ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু আয়ান এবং মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে শিশু আয়হামের খতনা করানোর জন্য অজ্ঞান করার পর ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়।
এছাড়া ল্যাবএইড হাসপাতালে অ্যান্ডোসকপি করার জন্য অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারে দুই রোগীর মৃত্যু হয়।
এসব ঘটনায় দেশে সঠিক পদ্ধতিতে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন সামনে আসে। এ অবস্থায় বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে হ্যালোথেন ব্যবহার না করতে নির্দেশ দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এদিকে চিকিৎকরা বলছেন, হ্যালোথেন, আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেন একই ওষুধ। তবে হ্যালোথেনের দাম একটু কম বলে ওষুধটি বেশি ব্যবহার করা হয়। যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে হ্যালোথেন আমদানি করত তারা এখন করছে না বলে ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা হ্যালোথেন অবৈধভাবে বিদেশ থেকে আনছে। এর সঙ্গে অন্যকিছু মিশিয়ে ১৩০০ টাকার ওষুধ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এজন্য ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশের সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিয়ালজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ান্স এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক।
এই সুপারিশের পরই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে ওষুধটির ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে কতিপয় রোগীর মৃত্যু ও আকস্মিক জটিলতা প্রতিরোধে এবং অ্যানেস্থেসিয়ায ব্যবহৃত ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে অ্যানেস্থেসিয়াতে হ্যালোজেন ব্যবহার ও এর বিকল্প নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া অ্যানেস্থেসিয়াজনিত মৃত্যু ও এর অপপ্রয়োগ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হ্যালোথেন, আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজারের সংখ্যা এবং এসব ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনে অর্থ বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া হ্যালোজেন ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, দেশের সব সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়ে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সব সরকারি হাসপাতাল থেকে বর্তমানে ব্যবহৃত হ্যালোথেন ডেপোরাইজারের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনের জন্যে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ