ইসলাম-পূর্ব আরবের অর্থনীতি ছিল খুব মন্দা। অভাব-অনটন, ক্ষুধা-যন্ত্রণা ছিল যাদের নিত্যসঙ্গী। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) আরব ভূমিতে আর্থিক সমৃদ্ধির পথ সচল করেছেন। নবুয়তপ্রাপ্তির মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
হাদিস ও ইতিহাসগ্রন্থে সে সময়ের দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক সচ্ছলতার নানা ফর্মুলা ও কর্মপন্থা বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থিক সমৃদ্ধির কয়েকটি ফর্মুলা তুলে ধরা হলো—
পারস্পরিক সহযোগিতা : দারিদ্র্য বিমোচনে পারস্পরিক সহযোগিতার বিকল্প নেই। হিজরতের প্রথম সময়ে মুহাজির সাহাবিদের আর্থিক সংকট ছিল চরম মাত্রায়। ঠিক তখনই নবীজি (সা.)-এর প্রিয় আনসার সাহাবিদের সহযোগিতার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। আবু হুরায়রা (রা.) সে সময়ের সহযোগিতার একটি চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন, ‘একবার আনসার সাহাবিরা নবী কারিম (সা.)-কে বলেন, আমাদের ও আমাদের ভাইদের (মুহাজির) মধ্যে খেজুরের বাগান ভাগ করে দিন। নবী (সা.) বলেন, না। তখন তাঁরা (মুহাজিরদের) বলেন, আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন, আমরা আপনাদের ফলে অংশীদার করব। তাঁরা বলল, আমরা শুনলাম ও মানলাম। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২৫)
অর্থসংকটে ধৈর্যধারণ : আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের বিভিন্ন সময় বিপদাপদ, অর্থসংকট ও বালা-মুসিবতে আপতিত করেন। তবে এই বিপদাপদ সব সময় আজাব ও শাস্তিরূপে পতিত হয় না; বরং কখনো বান্দার ঈমানি পরীক্ষা ও ধৈর্য যাচাই করা হয়ে থাকে। তখন যারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদের উত্তম বিনিময় দান করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা, ধন-সম্পদের ক্ষতি ও প্রাণহানি এবং ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা : আর্থিক সচ্ছলতা ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মপন্থা হলো আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, `যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে তার জীবিকা বৃদ্ধি হোক অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, সে যেন আত্মীয়ের সঙ্গে সদাচরণ করে। ‘ (বুখারি, হাদিস : ২০৬৭)
যথাসময়ে জাকাত প্রদান : জাকাতের প্রধান ও মূল উদ্দেশ্যই হলো দারিদ্র্য বিমোচন। যাদের সম্পদ অর্জনের কোনো যোগ্যতা বা সামর্থ্য ও সুযোগ নেই কিংবা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে জীবন ধারণের জন্য যা প্রয়োজন তা পাওয়ার সুযোগ নেই, তাদের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন ধনীদের সম্পদে। যারা তা আদায় করবে না, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘…সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! যে ব্যক্তি এ ধরনের উট অথবা গরু রেখে মৃত্যুবরণ করল, যার জাকাত সে দেয়নি, কিয়ামতের দিন সেগুলো পূর্বাবস্থা থেকে বেশি মোটাতাজা হয়ে তার কাছে আসবে এবং নিজেদের পায়ের খুর দ্বারা তাকে দলিত করবে এবং শিং দ্বারা গুঁতা মারবে। সব শেষের জন্তুটি চলে যাওয়ার পর আবার প্রথম জন্তুটি ফিরে আসবে। মানুষের সম্পূর্ণ বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির এ ধারা চলতে থাকবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৬১৭)
দ্রুত মোহর আদায় করা : মোহরের মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামীর জীবদ্দশায় তার সম্পদের অংশ পেতে সক্ষম হয়। ফলে বিশেষভাবে সমাজে লাঞ্ছিত-বঞ্চিত নারীরাও ন্যায্য মোহর প্রাপ্তির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। মোহরের প্রতি গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.) একবার বিবাহপ্রার্থী এক দরিদ্র সাহাবিকে বলেন, ‘যাও, ঘরে খুঁজে দেখো, একটি লোহার আংটিও পাওয়া যায় কি না!’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৩৫)
সুদকে না বলা : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের দলিল লেখক এবং সুদের দুই সাক্ষীর ওপর অভিশাপ করেছেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৭৭)
দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাওয়া : দারিদ্র্যের জাঁতাকল থেকে বাঁচতে নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করা।
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। ’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনার কাছে কুফরি ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাইছি। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)
আল্লাহ আমাদের মহামূল্যবান ঈমান রক্ষা করার তাওফিক দান করুন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ