বাংলা৭১নিউজ, নুরুল আলম বাকু, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : সংশ্লিষ্টদের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, বন্দর এলাকায় মাদকদব্য বেচাকেনা ও সেবন, অবাধে সাধারন মানুষের চলাফেরাসহ নানা অনিয়মের কারনে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর ও আন্তর্জাতিক রেলওয়ে ষ্টেশন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। অব্যহতভাবে চুরি হচ্ছে ইয়ার্ডে রাখা রেলের বিভিন্ন মূল্যবান সরঞ্জামাদিসহ ওয়াগনে থাকা ভারত হতে আমদানীকৃত ব্যাবসায়ীদের মালামাল। বন্দরের ঐতিহ্য রক্ষায় নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতনমহল।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যস্থাপনা সেইসাথে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ফাঁদে পড়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে ষ্টেশন ও রেলবন্দর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। হারাতে বসেছে বন্দরের দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্য। নিরাপত্তাহীনতায় রেলবন্দর ও রেলষ্টেশনের মালামাল সেইসাথে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। অব্যাহতভাবে ওয়াগন থেকে আমদানিকৃত পণ্য চুরিসহ সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়মে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কমে গেছে। ফলে বিপুল অংকের রাজন্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন্দরটি। রেলের সরঞ্জামাদি ও বন্দরের মালামাল চুরি ঠেকাতে কয়েক বছর আগে রেল বিভাগ ষ্টেশনের উত্তর দিকের রেল ইয়ার্ডের উভয় পাশে নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করলেও এখন পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি। সেইসাথে রেলের জায়গায় এখনও অনেক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। যার কারনে এসব স্থানে সীমানাপ্রাচীর নির্মিত না হওয়ায় অবন্থা রয়েছে আগের মতই। এসব স্থাপনার আড়াল থেকে ফাঁকা স্থান দিয়ে সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা ওয়াগনের মালামাল লুট করে বাইরে পাচার করে। এছাড়া দক্ষিন পাশের ইয়ার্ডটিও রয়েছে সম্পুর্ণ খোলা ও অরক্ষিত। এখানে রাতদিন ট্রাক-বাসসহ নানারকম যানবাহন পার্কিং ও সেইসাথে বন্দর এলাকায় সাধারন মানুষের অবাধ বিচরন ও নিরাপত্তা কর্মীদের দুর্নীতিই চুরির অন্যতম কারন বলে জানিয়েছেন অনেকে। রেলের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে চা-পান-বিড়িসহ বিভিন্ন দোকানপাট। পুরাতনবাজার রেলগেটের আশপাশ থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত রেল লাইনের দু’পাশে অবৈধভাবে রেলের জায়গা দখল করে নির্মান করা হয়েছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। রাতদিন এসব স্থানে চলে মাদকের আবাধ বিকিকিনি ও সেবন। আর এখানে বসেই ইয়ার্ডের নিরাপত্তারক্ষী ও চোরের মধ্যে চুক্তি ও টাকা-পয়সার লেনদেন হলে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ইতিপুর্বে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনার সাথে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ ও রেলের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমানও মিলেছে। গত বছর রেলইয়ার্ড থেকে কাঠের স্লিপার চুরি করে পাশের একটি স্ মিলে চেরাই করার সময় দর্শনা বিজিবি’র হাতে স্লিপারসহ রেলের নিরাপত্তাবাহিনীর দু’সদস্য ধরা পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে জানিয়েছেন, এভাবে ইতোমধ্যেই লক্ষ লক্ষ টাকার স্লিপার চুরি হয়ে গেছে। কয়েক বছর আগে রেলবন্দরে বিজিবি আমদানি করা মালামাল লুটের ঘটনায় ষ্টেশন সংলগ্ন পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র, ফেনসিডিল, লগ কাঠ, মোটর পা¤প, লুটকৃত সয়াবিন ভূষি ও রেলপুলিশের ৪ সেট পোশাকসহ একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ৩ সদস্যকে আটক করে। এসময় বিশেষ তদবিরে মুচলেখা নিয়ে দু’জনকে ছেড়ে দিয়ে মাত্র একজনকে মামলাসহ দামুড়হুদা থানায় সোপর্দ করা হয়।
কিছুদিন বিরতির পর থেকে চক্রটি রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর অসাধু কিছু সদস্যদের সহযোগীতায় আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত এ সব অপরাধমুলক কর্মকান্ডের খবর স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে একাধিকবার ছাপা হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় চুরির ঘটনা অব্যহত রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় বন্দর এলাকায় অবাধে চলে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বেচাকেনা ও সেবন। সেইসাথে বসে জুয়াড়িদের অড্ডা। কয়েক মাস পুর্বে নিউজ করার উদ্দেশ্যে বন্দর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে দেখে ছবি তোলার সময় সংঘবদ্ধ মাদক ব্যাবসায়ীদের হামলায় জাতীয় দৈনিকে কর্মরত একজন সাংবাদিক রক্তাক্ত জখম হন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে রেলের নিরাপত্তা বিভাগ ও ষ্টেশন সুপারকে অবহিত করলে তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাতে রেলের ওয়াগন ভেঙে চুরি হওয়া ৭ বস্তা চাউলসহ বন্দর এলাকা থেকে দর্শনা শান্তিপাড়ার মৃত পিরুর ছেলে মামুনকে আটক করে। পরে আটককৃত পিরুর পরিবারের লোকজনের সাথে দেন-দরবার ও স্থানীয় এক সাংবাদিকের সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই আলতাফ হোসেনের কাছে মোবাইলফোনে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, চোর সন্দেহে শান্তিপাড়ার পিরুকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে কোন মালামাল উদ্ধার করা হয়নি। পরে তার গার্জিয়ান পক্ষ ও স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিকের সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি আরোও বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ ইয়ার্ডে তাফালিং হচ্ছে ও চোরের উৎপাত বেড়েছে। তাই ইয়ার্ডে নিয়মিত টহল অব্যহত রয়েছে। কিছুদিন আগে বন্দর এলাকা থেকে একটি দেশী ধারালো অস্ত্রসহ একজনকে অটক করে চালান দেওয়া হয়েছে। আমি পাঁচ বছর যাবৎ এখানে আছি তাই এ এলাকায় কারা চুরি করে আমি তাদেরকে চিনি। তাই বন্দর এলাকায় তারা ঢুকলেই তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সতর্ক করে থাকি। তবে এখন অবস্থা ভাল।
এ ব্যাপারে জানতে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে ষ্টেশন সুপার মীর লিয়াকত আলির সাথে মোবাইলফোনে কথা হলে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী তো আমাকে কিছু বলেনি। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা। আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জেনে ভালই হলো। ব্যাপারটা আমি তদন্ত করে দেখব।
বাংলা৭১নিউজ/জেএস