‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাংলা একাডেমি। মেলা হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শেষ মুহূর্তে চলছে প্যাভিলিয়ন ও স্টল তৈরির কাজ। ওই এলাকায় গেলেই শোনা যায় টুং টাং আওয়াজ।
বাংলা ভাষাভাষীদের প্রাণের উচ্ছ্বাস ঘিরে এই বইমেলার আয়োজন। গত বছরের তুলনায় এবারের মেলায় ইউনিট বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। ৫১টি প্রতিষ্ঠান বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৯৩টিতে। এরইমধ্যে প্যাভিলিয়ন (২৪×২৪), প্যাভিলিয়ন (২০×২০), চার ইউনিট, তিন ইউনিট, দুই ইউনিট (সাধারণ), এক ইউনিট (সাধারণ) এবং শিশুদের জন্যে মেলার অংশে শিশু ইউনিট-৩, ২ ও ১ হিসাব করে লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
গত ২১ জানুয়ারি পুরোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও ২২ জানুয়ারি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের লটারিগুলো ডিজিটাল সফটওয়্যার ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ও যাবতীয় বিষয় নিয়ে ৩০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
মেলার নীতিমালায় বলা হয়েছে, মেলায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানবিরোধী, যেকোনো জাতিসত্তাবিরোধী, অশ্লীল, রুচিগর্হিত, শিষ্টাচারবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন বা জননিরাপত্তার জন্য বা অন্য কোনো কারণে বইমেলার পক্ষে ক্ষতিকর কোনো বই বা পত্রিকা বা দ্রব্য অমর একুশে বইমেলায় বিক্রয়, প্রচার ও প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে একাডেমি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, দিন-রাত এক করে কাজ করছেন নির্মাণশ্রমিকরা। তাদের লক্ষ্য ৩০ জানুয়ারির আগেই সব নির্মাণ ও সাজসজ্জার কাজ শেষ করা।
কাঠমিস্ত্রী সুমন বড়ুয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করছি। আমি একা ১০টি স্টলের কাজের চুক্তি করেছি। আমার সঙ্গে ১৩ থেকে ১৪ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন। তারা দৈনিক মজুরি হিসেবে কাজ করেন। সবাই মিলে চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে।’
প্রকাশক রুহেল রহমান বলেন, ‘বাংলা একাডেমি থেকে আমাদের বারবার চাপ দেওয়া হচ্ছে যাতে দ্রুত কাজ শেষ করে ফেলি। কিন্তু চাইলেই সেটা করা সম্ভব না। মিস্ত্রি পাওয়া যায় না, আবার এক মিস্ত্রি অনেকের কাজ করেন। ঠিকমতো সময় দেন না। এ ছাড়াও সাজসজ্জা তো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চাইলেই তো এই বিষয়টা দ্রুত করে ফেলা যায় না। তাই ইচ্ছে থাকলেও আমাদের একটু সময় লাগছেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
স্টলের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য প্রকাশকদের তাগিদ দিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। তিনি প্রকাশকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের এখন কাজ হচ্ছে, নিজেদের প্রস্তুতিগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।
আপনারা কেউই ২৯-৩০ তারিখের দিকে স্টল বানাবেন এমন প্ল্যান করবেন না। আমরা আমাদের অংশের কাজগুলো দ্রুত করছি, মেলার কয়েকদিন আগেই শেষ হবে। আপনাদের উচিত মেলা সুন্দরভাবে করার জন্য আপনাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করা।’
মেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও একুশে ফেব্রুয়ারি ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বইমেলা।
শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলার আয়োজন থাকবে। এরপর শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা ও শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে। বিরতির পর রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর অর্থাৎ সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
প্রতিবারের মতো এবারের মেলায়ও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য ‘নতুন বই উন্মোচন মঞ্চ’ এবং ‘লেখক বলছি মঞ্চ’ থাকছে। নতুন বই উন্মোচন মঞ্চে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং লেখক বলছি মঞ্চে প্রতিদিন নতুন বই সম্পর্কে লেখক-পাঠক-দর্শকের মধ্যে আলোচনা, মতবিনিময় ও প্রশ্নোত্তর পর্ব চলবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ