বাংলা৭১নিউজ, চট্টগ্রাম : বিপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। অথচ এই বিপিএলে তাদের প্রথম পাঁচ ম্যাচ দেখে সেটি বোঝার উপায় ছিল না! পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই যে হেরেছিল তারা।
অবশেষে ষষ্ঠ ম্যাচে এসে জয়ের দেখা পেল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। সোহেল তানভীর ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের দারুণ বোলিংয়ে রাজশাহী কিংসকে ৩২ রানে হারিয়েছে কুমিল্লা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার দিনের দ্বিতীয় এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৫২ রান করে কুমিল্লা। জবাবে এক ওভার বাকি থাকতে ১২০ রানে অলআউট হয়ে যায় রাজশাহী।
১৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা দেখেশুনেই করেছিল রাজশাহী। মুমিনুল হক ও জুনায়েদ সিদ্দিক মিলে প্রথম ৪ ওভারে বিনা উইকেটে তোলেন ২২ রান। কিন্তু পঞ্চম ওভারে সোহেল তানভীরের পরপর দুই বলে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা।
তানভীরের তৃতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন জুনায়েদ (১৩ বলে ১০)। পরের বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে বিদায় নেন সাব্বির রহমান। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল সাব্বিরের ব্যাটে লেগে প্রথম স্লিপে খালিদ লতিফের হাতে জমা পড়ে।
চারে নামা উমর আকমলও বেশিক্ষণ টেকেননি। প্রথমবার আক্রমণে এসেই তাকে সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। শর্ট বল শট খেলতে গিয়ে সুইপার কভারে ইমরুলের হাতে ধরা পড়েন উমর (১২ বলে ৩)।
তখনো একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি নুরুল হাসানও। সাইফুদ্দিনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে শান্তর হাতে ক্যাচ দেন উইকেটকিপার এই ব্যাটসম্যান (৯ বলে 8)।
মুমিনুল অবশ্য ফিফটি তুলে নেন। টেন ডেসকাটের বলে চার মেরে ৪২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি। কিন্তু ১৯ রান আসা এই ওভারের শেষ বলে আউট হয়ে যান তিনি। ফুলটস বলে ডিপ মিড উইকেটে লতিফের হাতে ধরা পড়েন (৪৩ বলে ৫৩)।
নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা অধিনায়ক স্যামি পরের ওভারের প্রথম বলেই রানআউটে কাটা পড়েন। রাজশাহীর স্কোর তখন ৬ উইকেটে ৯২, জয়ের জন্য ৩৫ বলে প্রয়োজন ৬২।
১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে সামিত প্যাটেলকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফি। শেষ ১৮ বলে রাজশাহীর দরকার পড়ে ৪৮। কিন্তু ১৮তম ওভারে তানভীরের দ্বিতীয় বলে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ (১০ বলে ৫)। পঞ্চম বলে আউট ফরহাদ রেজাও। দুজনেরই ক্যাচ নেন লিটন দাস।
১৯তম ওভারে এলো সেই ‘মাহেন্দ্রক্ষণ’। এই ওভারের শেষ বলে ভেঙে গেল মোহাম্মদ সামির স্টাম্প, সঙ্গে ভাঙল কুমিল্লার হারের বৃত্তও। আর রাজশাহী করল হারের হ্যাটট্রিক।
৩ ওভারে ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন তানভীর। ৪ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট সাইফুদ্দিনের।
এর আগে টস জিতে কুমিল্লাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাজশাহী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। ব্যাটিংয়ের শুরুটা এদিনও ভালো হয়নি কুমিল্লার। তৃতীয় ওভারেই ফিরে যান ওপেনার খালিদ লতিফ। ফরহাদ রেজার বলে জুনায়েদ সিদ্দিককে ক্যাচ দেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান (৯ বলে ৬০)।
তিনে নামা আরেক পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদও ভালো করতে পারেননি। ১১ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তিনিও জুনায়েদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। কুমিল্লার স্কোর তখন ২ উইকেটে ৪১।
তৃতীয় উইকেটে দলকে ৮৪ পর্যন্ত টেনে নিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্তকে ফিরিয়ে ৪৩ রানের এ জুটি ভাঙেন স্যামি। মিরাজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৪০ বলে ৪১ করেন শান্ত।
এরপর ইমরুল ও মাশরাফি মিলে দলকে ভালোই এগিয়ে নিতে থাকেন। স্যামির এক ওভারে দুই চার মেরে বড় ইনিংস খেলার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ইমরুল। কিন্তু ২৫ বলে ৩৪ করে রানআউটে কাটা পড়েন এই বাঁহাতি। পরের ওভারে স্যামির বলে নুরুল হাসানের ক্যাচ হয়ে ফিরে যান মাশরাফিও (১০ বলে ১০)।
কুমিল্লার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১১১। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ২৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪১ রানের জুটিতে এই বিপিএলে আগে ব্যাট করে কুমিল্লাকে প্রথম দেড়শ রানের পুঁজি এনে দেন রায়ান টেন ডেসকাট ও সোহেল তানভীর। ১৫ বলে ২১ করে অপরাজিত ছিলেন ডেসকাট। ১৫ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন তানভীর।
৩৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে রাজশাহীর সেরা বোলার স্যামি। এ ছাড়া মিরাজ ও ফরহাদ রেজা নেন একটি করে উইকেট।
বাংলা৭১নিউজ/সি