জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যা করেছেন। মারা যাওয়ার আগে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে এক সহপাঠী ও শিক্ষককে দায়ী করেছেন।
তবে, অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে ৮ জন মিলে টর্চার করত। শনিবার (১৬ মার্চ) সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তাহমিনা শবনম বলেন, ‘সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী, রাফি, মাহিয়ান, লাকি, রিমি, আঁখি, বর্ণা ও শিক্ষক দ্বীন ইসলাম অবন্তিকাকে মানসিক টর্চার করত। যে কারণে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি কোনোদিন কারো ক্ষতি করি নায়। আজ আমার এতবড় সর্বনাশ হলো। আমার মেয়ে ভালো ছাত্রী ছিল, এটাই কি তার অপরাধ? আমার মেয়ে ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট ছিল, এটাই কি তার অপরাধ?’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাহমিনা শবনম বলেন, ‘গত বছর স্বামীকে হারিয়েছি, আজ মেয়েকে হারাইলাম। এবার ছেলেটাকে নিয়ে হয়তো নিজেও শেষ হয়ে যাবো।’
তিনি বলেন, ‘অবন্তিকার মেন্টালিটি অনেক স্ট্রং (শক্ত) ছিল। এই স্টুডেন্টগুলা (অভিযুক্তরা) তার (অবন্তিকার) বাবাকেও বাঁচতে দেয় নাই, এখন তাকেও দিল না। আমি মেয়ের সব বিষয়ে জানতাম।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রক্টরকেও জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একবার তারা (অভিযুক্তরা) ‘সরি’ বলে পরক্ষণেই আবার ফেসবুকে হাত-পা গুঁড়িয়ে দেবে বলে স্ট্যাটাস দিয়েছিল।’ – যোগ করেন তিনি।
তাহমিনা শবনম বলেন, ‘দ্বীন ইসলাম নামের এক শিক্ষকের কাছে বিচার দিলাম, উল্টো সে আমার মেয়েকে টর্চার করেছে। আমি আমার মেয়েকে হত্যার বিচার চাই।’
এর আগে, শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মৃত জামাল উদ্দিনের মেয়ে।
মারা যাওয়ার আগে ফেসবুকে দেওয়া অবন্তিকার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।
আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।
আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস (বিচার) পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়।
আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে।
আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে “…. (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?
আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তো থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সো কিনা আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।
আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না।
এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।
কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে