অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয় কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে প্রাথমিক একটি ধারণা ও কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
শনিবার (১০ আগস্ট) বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেয়া হয়। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কী চাই?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহম্মদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরীন, তানজিম উদ্দিন খান, সাঈদ ফেরদৌস, কামরুল হাসান মামুন, সালমান রুশদী প্রমুখ। উপস্থাপনা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও ঢাবির সামিনা লুৎফা।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ড, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আমরা আজ এমন এক পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছি, যেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সামনের দিনের করণীয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু শিক্ষকরাই নন, সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে নতুন সরকারের করণীয় নিয়ে।
তারা বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক রূপরেখা উপস্থাপন করেছিল। পদত্যাগ কীভাবে হবে এবং নতুন সরকার কীভাবে গঠিত হবে এবং তার করণীয় কী- এই ছিল রূপরেখার সারবস্তু।
এ রূপরেখা উপস্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরাচারীর পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে বহু মানুষের প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হবে তা যেন আবার একটি নতুন স্বৈরাচারী সরকার ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত না করে তা নিশ্চিত করা।
এই রূপরেখা নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, যা আমাদের ইতিবাচক মনে হয়েছে। রূপরেখাটি খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল, কারণ আলোচনা সাপেক্ষে, তর্ক-বিতর্ক ও মত-বিনিময়ের মাধ্যমে এই রূপরেখাটকে আমরা আরও সম্প্রসারণ করতে চেয়েছি। আজ আমরা আন্দোলনের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সে আলোচনার সূত্রপাত করতে যাচ্ছি।
১. জনগণের জান-মালের সুরক্ষায় অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামতে হবে। সব জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবার জন্য সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। শিল্পস্থাপনা, উপাসনালয়, মাজার, ভাস্কর্যের ওপর হামলা ঠেকাতে হবে ও হামলার বিচার করতে হবে।
৩. জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং জনগণের ওপর নৃশংস জোর-জুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। পাশাপাশি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত তদন্ত ও বিচারকাজ শুরু করতে হবে।
৪. কোটা আন্দোলনে যারা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন, তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল করতে হবে। এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দিতে হবে।
৬. অর্থনীতির চাকা সচল করতে শিল্প-কলকারখানা খুলে দিয়ে সবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ