নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ পদটি প্রায় তিন বছর ধরে ফাঁকা। এই হাসপাতালে এখন কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। অথচ প্রতিদিন শতাধিক অসুস্থ শিশু নিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভিড় জমান স্বজনরা। হাসপাতালে ভর্তি থাকে অর্ধশত শিশু।
অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনুরোধে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে চলে এসব শিশুদের চিকিৎসা সেবা। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিবাবকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনা শুরুর আগে থেকে প্রায় তিন বছর ধরে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ পদটি ফাঁকা রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিক্যাল অফিসারদের দিয়ে কোনো রকমে চলছে শিশু রোগীদের চিকিৎসা। বর্তমানে নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক ও নেত্রকোনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সপ্তাহে ভাগাভাগি করে প্রতিদিন হাসপাতালে এসে শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া শিশুদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবায় সেবিকারাই ভরসা।
জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে ঠাণ্ডায় সর্দি জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, চর্ম রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসার জন্য ১১৫ জন শিশুর টিকিট নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১১০ নম্বর কক্ষের সামনে টিকেট হাতে শিশুদের নিয়ে চিকিৎসার জন্য লাইনে অপেক্ষা করছেন স্বজনরা। কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। কিছুক্ষর পর পর পিয়ন দরজা খুলে রোগী ভেতরে ঢুকাচ্ছে আর বের করছে।
ওই কক্ষের সামনে নেত্রকোনা সদর উপজেলার উলুয়াহাটি গ্রামের আছিয়া তিন মাস বয়সের তার নাতনি সাউদাকে নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, চার দিন ধরে নাতনি সর্দি-জ্বরে মারাত্মকভাকে আক্রান্ত। সকাল থেকে অপেক্ষা করে টিকিট পেয়েছি।
চার বছরের শিশু সোমাইয়ার মাথায় এলার্জির সমস্যা নিয়ে অপেক্ষা করছেন একই উপজেলার হাতকুন্ডলি গ্রামের আব্দুল গনি। ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, একজন সেবিকা শিশুর ওজন মেপে টিকেটে লিখছেন। পাশের টেবিলে হাসপাতালের একজন নারী মেডিক্যাল কর্মকর্তা (শিশু বিশেষজ্ঞ না) নানা রোগে আক্রান্ত সব শিশুর সমস্যা শুনে চিকিৎসা করছেন।
সোমবার শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া, জন্ডিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত ৩২ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে এক থেকে ২৮ দিন বয়সের ১৮ জন। ২৯ দিন থেকে পাঁচ বছর বয়সের ১৪ জন শিশু।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত একজন সেবিকা বলেন, হাসপাতালে স্থায়ী শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় জরুরি ভিত্তিতে শিশুদের চিকিৎসায় সমস্যা হয়। আমরা বিশেষ ট্রেনিং নিয়েছি। তাই যতটুকু পারি নিজেরা সামল দেই। তবে বাইরে থেকে প্রতিদিন একজন ডাক্তার এসে ভর্তি থাকা শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যান।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. একরামুল হাসান বলেন, হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তরের একটি পদ থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে পদটি ফাঁকা রয়েছে। নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজের একজন ডাক্তার বাই রিকোয়েস্টে হাসপাতালের এসে ইনডোরে ভর্তিকৃত শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসাররা আউটডোরে আসা শিশুদের চিকিৎসা করেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ