রংপুর মেডিক্যাল কলেজের (রমেক) নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে নির্ধারিত সময়ে অপসারণ না করায় কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাট ডাউন পালন করেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে আজ মঙ্গলবার দুই ঘণ্টার শাট ডাউন ও দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চিকিৎসক, ছাত্র ও কর্মচারীদের অংশগ্রহণে এ আন্দোলন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মাহমুদুল হক সরকার, সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার সচিব শরিফুল ইসলাম মন্ডল, ডা. মোখলেসুর রহমান সরকার, ডা. নিখিলেন্দু গুহ রায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নতুন অধ্যক্ষ ডা. মো. মাহফুজার রহমানকে না সরানোর কারনে আজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। এরপরও যদি দাবি না মানা হয় তাহলে আগামীকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) থেকে কমপ্লিট শাটডাউন পালন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর কোনো চিকিৎসকের ঠাঁই রমেকে হবে না। নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তিনি উপাধ্যক্ষ থেকে অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ ছাত্র আন্দোলনে তিনি সরাসরি ছাত্রদের দমনে নিয়োজিত ছিলেন। এমন একজনকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়াটা শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার শামিল।
এর আগে গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) থেকে নতুন অধ্যক্ষ ডা. মাহফুজার রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে রমেকের চিকিৎসক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ওইদিন তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন ওই সময়ের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমান। এ ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে মিলে শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্ট বদলাতে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী চিকিৎসককে চাপ দিয়েছিলেন তিনি ও সেই সময়ের অধ্যক্ষ। তাছাড়া তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদেরও (স্বাচিপ) নেতৃত্ব দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের অভিযোগ, ডা. মাহফুজার রহমান উপাধ্যক্ষ থাকাকালে তার কক্ষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবাধ যাতায়াত ছিল। বিশেষত ছাত্রলীগ নেতা প্রান্ত সারাক্ষণই তার কক্ষে বসে থাকত। এ নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলেও আপত্তি তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আমলে টানা ৫ বছর উপাধ্যক্ষ ও ৪ বছর মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ডা. মো. মাহফুজার রহমান। এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ মকবুল হোসেনের সই করা চিঠিতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে শাহ মো. সরওয়ার জাহানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজার রহমানকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয় সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ