কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, অতিরিক্ত মামলা দেশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করছে। মানুষ মামলায় জড়িত হয়ে আদালতে ঘুরে ঘুরে তাদের সময় ও টাকা-পয়সা নষ্ট হচ্ছে। মামলা মোকদ্দমায় ব্যস্ত থাকায় তারা উৎপাদন থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
শনিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম আয়োজিত তাকে অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন মোহাম্মদ ইসমাইল।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। অথচ আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এদেশের মানুষ বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ, যারা কৃষি উৎপাদন কাজে সম্পৃক্ত তাদের বিরাট অংশকে কোনো না কোনো মামলায় জড়ানো হয়। সেখানে দোষীর চেয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের বেশি জড়ানো হয়। যার কারণে তারা সারা বছর আদালতে দৌঁড়াদৌঁড়িতে ব্যস্ত থাকে এবং উৎপাদন কার্যে ব্যাঘাত ঘটে।
জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বেশি হত্যা মামলার রেকর্ড কক্সবাজারের। আমি এখানে যোগদান করার সময় বিচার শেষ না হওয়া ৯৯৮টি হত্যা মামলা ছিল। এছাড়া শুধু রোহিঙ্গা হত্যা মামলা রয়েছে ১৫০টি। এছাড়া ইয়াবার মামলা রয়েছে ১০ হাজার। এরমধ্যে জামিন বাণিজ্যও চলছে রমরমা।
অনেক আইনজীবী তদবির করতে আসেন জামিন দেয়ার জন্য। পাঁচ শতাধিক মিস মামলা জমা রেখেছি। যে মামলাগুলোর জামিন দেয়ার জন্য অনেকে তদবির করছেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু অন্যায়ের কাছে আমি কখনো মাথা নত করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যায়ের কাছে মাথা নত করিনি বলে অনেকে আমার নামে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যও করেছেন। কিন্তু আমি আইন ও সরকারি দায়িত্বের প্রতি অটুট ছিলাম। সরকার আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে এখানে পাঠিয়েছে, আমি সেই দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করেছি। কক্সবাজারের অনেক কয়েদী অন্যান্য জেলার কারাগারে ছিল, যাতে আদালতে অনুপস্থিত দেখিয়ে বিভিন্ন সুযোগ নেওয়া হয়।
আমি তা টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই সিস্টেম বাতিল করেছি। আমি সবসময় চেয়েছি, জামিন করে দেয়ার নামে অসহায় মানুষকে হয়রানি তথা জামিন বাণিজ্য বন্ধ হোক। এবং নামে-বেনামে নির্দোষ মানুষকে মামলা না দিয়ে দেশকে উৎপাদনশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হোক।’
এ সময় কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ. ন. ম হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এম আনোয়ারুল হক, নির্বাহী সদস্য ফাতেমা আঙ্কিজ ডেইজি, ইকরাম চৌধুরী টিপু, মাইনুদ্দিন হাসান শাহেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ