সাতক্ষীরার কলারোয়ায় অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনদিনে আট গরু ও ৩৬টি ছাগল মারা গেছে। এছাড়া এলাকার শতশত গরু ছাগল ভাইরাসে আক্রমণে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে।
বুধবার (২০মার্চ) থেকে শুক্রবার (২২ মার্চ) পর্যন্ত সাতক্ষীরার উপজেলার দলুইপুর গ্রামের চেয়াম্যানপাড়ায় খোঁজ নিয়ে এ তথ্য জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অসুস্থ হওয়ার পর থেকে এসব গুরু-ছাগল ঠকি মতো খায় না। জ্বর-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে গৃহপালিত প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এরপর হঠাৎ করেই মারা যাচ্ছে। প্রায়ই বিভিন্ন বাড়িতে অজানা এই ভাইরাসে গরু-ছাগল আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে।
আক্রান্ত পশুর মালিকরা জানান, দলুইপুর থেকে কলারোয়া প্রাণী সম্পদ অফিসের দূরত্ব ১২কিলোমিটার। এই দূরের রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাজার টাকা ব্যয়ে গরু ছাগল নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অপরদিকে পশু চিকিৎসার নামে গ্রাম্য ডাক্তাররা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব ডাক্তারদের চিকিৎসায় গরু ছাগলের রোগ ভালো হচ্ছে না।
ভাইরাস ধীরে ধীরে রোগটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের সহজ সরল কৃষক ও দিনমজুররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এনজিও অফিসের কিস্তির টাকা নিয়ে এসব গরু-ছাগল ক্রয় করেছেন। এসব গরু ছাগল লালন পালন করেই অনেকের সংসার চলছে।
দলুইপুর গ্রামের শুভ সরদার জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে তার একটি বিদেশি দুধের গাভী (আনুমানিক মূল্য আড়াই লাখ টাকা), পাশের বাড়ির সেলিনা আনোয়ার ময়নার দুটি গরু অজানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিনই ভাইরাস রোগে একের পর এক গরু ছাগল মারা যাচ্ছে। গত তিন দিনে দলুইপুর চেয়ারম্যানপাড়ায় মোট ৪৪ টি গরু-ছাগল মারা গেছে।
খোরদো গ্রামের গ্রাম্য চিকিৎসক আসাদ জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ ধরে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলের ভাইরাস রোগ দেখা দিয়েছে। আমাদের চিকিৎসায় এ অজানা ভাইরাস রোগ ভালো হচ্ছে না। প্রতিদিন বিভিন্ন বাড়ির হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় পশু চিকিৎসক মঈনুল ইসলাম বাবুল জাগো নিউজকে জানান, আক্রান্ত গরু-ছাগল জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি, মুখের ভিতরে ঘা জ্বরা রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাতলা পায়খানা হচ্ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত গরু ছাগল খাওয়া ছেড়ে দিয়ে দুর্বল হয়ে মারা যাচ্ছে। তবে এখনো এ গ্রামে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের কোনো চিকিৎসক আসেনি।
মরিয়ম খাতুন নামে গ্রামের এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে জানান, আমার তিনটি গরু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভুগছে। অথচ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলেও কোনো সরকারি ডাক্তারের পরামর্শ বা ওষুধ মিলছে না। গ্রামে প্রতিদিনই গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে। আমার গরু নিয়ে আতঙ্কে আছি।
কলারোয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও রোগের লক্ষণ অনুযায়ি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ঐ এলাকায় লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ছড়িয়ে পড়েছে। আগামীকাল আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম ঐ এলাকায় গিয়ে আক্রান্ত প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করবে। এরপর মোবাইল টিমের মাধ্যমে পশুর মালিকদের পরামর্শ ও আক্রান্ত প্রাণীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।