দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ২০২৪ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ৩৮ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার।
সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই জ্বালানি তেল আমদানি করবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়েল আওতাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটি নিজেদের তহবিল থেকে এই তেল ক্রয় করবে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং ৫০ শতাংশ উম্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আমদানি করা হচ্ছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে শুধু তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পূর্বানুমোদনের ভিত্তিতে এই জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা ও তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর তেল উৎপাদন হ্রাসজনিত কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি বা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, স্থানীয়ভাবে জ্বালানি তেলের উৎস হিসেবে ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ পরিমাণ তেল সরবরাহ করে থাকে। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত বিভিন্ন জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী ক্রুড অয়েল ভিত্তিক বিটুমিন প্ল্যান্ট ও ক্যাটালাইটিক ফরমিং ইউনিট (সিআরইউ) বিশিষ্ট প্ল্যান্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল হিসেবে ন্যাফথা, কনডেনসেট, ক্রুড অয়েল আমদানি করে রিফাইনিংয়ের মাধ্যমে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে থাকে।
২০২৪ সালেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় উৎস থেকে জ্বালানি তেলের পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া, বর্তমানে বন্ধ থাকা নন ক্যাটলাইটিক রিফরমিং ইউনিট (নন-সিআরইউ) ফ্র্যাকশনেশন প্ল্যান্টগুলো চালু হলে স্থানীয়ভাবে আরও তেল পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বিপিসি।
সূত্র জানায়, বিগত সময়ের জ্বালানি তেলের চাহিদা, বিক্রয় প্রবণতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে।
উল্লেখ্য, সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে থাকে এবং লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সংক্রান্ত জটিলতায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি তেলে আমদানি হ্রাস পাওয়ায় ২০২৩ সালের জুন বা জুলাই মাস থেকে বিপিসি প্রান্তে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, চলতি বছরের শুরুতে দেশে ডিজেলের চাহিদা বিগত বছরগুলোর একই সময়ের তুলনায় বেশি থাকলেও সম্প্রতি ডলার সরবরাহের সংকোচন বা ব্যয় সংকোচনের ফলে ডিজেলের চাহিদা কিছুটা কমেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে চাহিদা ও আমদানিতব্য প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত আমদানিতব্য পরিমাণের পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত জরুরি চাহিদা পূরণের জন্য কিছু অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবে সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সূত্র জানায়, বিক্রয় প্রবণতা ও পর্যাপ্ত মজুদ বিবেচনায় ২০২৪ সালের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে মোট আমদানির পরিমাণ গ্যাস অয়েল ২৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১, ৩ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, মোগ্যাস ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৬০ হাজার মেট্রিক টন সর্বমোট পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে ৩৮ লাখ মেট্রিক টন।
রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হলে তাতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নীতিগত অনুমাদন দিয়েছে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে