জলাবদ্ধতার কারণে যশোর ভবদহ অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের যশোর-খুলনার কৃষকরা মূলত ধান ও মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল ।
কৃষকরা বলছেন, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় বোরো আবাদের মৌসুম। তবে এবারের চিত্র ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। ফসল রোপণ চলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ পর্যন্ত। অথচ যশোরে ৩টি উপজেলার ২৭টি বিল এখনো পানিতে টইটম্বুর। মুক্তেশ্বরী টেকা, শ্রী, হরি ও শৈলমারী নদীতে পলি পড়ায় এসব বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে আছে, বলছেন ভবদহ পাড়ের কৃষক।
স্থানীয় কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোর জেলার অভয়নগর, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত।
মনিরামপুর উপজেলায় কুলটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৩৫০ হেক্টর জমি পানির নিচে। যেখানে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে বলে জানান উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেখা বিশ্বাস। এ উপজেলার প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি এখনো কোমর সমান পানির নিচে।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাম্মদ লাখলী খাতুন বলেন, “সাধারণত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বোরো মৌসুম শুরু হয়। দ্রুতই আবাদি জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে চাষযোগ্য করে তুললার চেষ্টা চলছে, নয়তো কৃষক বোরো মৌসুম ধরতে পারবেন না। তবে এখনো পর্যন্ত ১৫ হাজার হেক্টর জমি বোরো চাষের অনুপযোগী। ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে সরকারি ভাবি বীজ পৌছে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন উঁচু কোনো স্থানে ধানের পাতা তৈরি করবার জন্য, যাতে করে জমি থেকে পানি কমলেই দ্রুত সেখানে বোরো আবাদ শুরু করতে পারে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেন, “বৃষ্টির পানি মূলত খাল দিয়ে নদ-নদীতে চলে যায়। তবে ভবদহ অঞ্চলের বেশির ভাগ খাল দখল-দূষণে নাব্যতা হারিয়েছে। পলি জমেছে নদ-নদীতে । ফলে দ্রুত সময়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেন, “এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমডাঙ্গা খালের অধিগ্রহণ করে খাল বড় করবার ব্যবস্থা হচ্ছে, ইতোমধ্যে ভবদহের উজানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদী প্রস্থ ও গভীরতা বাড়ানোর কাজ চলমান।”
ভবদহ স্লুইস গেটের উজানে নদী খনন কাজের দ্বায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী (মেকানিকাল ডিভিশন) সুব্রত আচার্য বলেন, “ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে শুরু করে শ্রী নদী, হরি নদীর দোহাখোলা, শোলগাতিয়া, খুলনার খর্ণির গ্যাংরাইল নদী পর্যন্ত পলি নিষ্কাশনের কাজ করছে ৭টি স্কেভেটর। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাগাতার ১৫/১৬ ঘণ্টা কাজ অব্যাহত রয়েছে।”
তবে সম্প্রতি সরজমিনে ৭টি স্কেভেটরের কাছে গিয়ে ২টিতে কোনো লোক পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানান, মাঝে মাঝে চলে স্কেভেটরটি। অধিকাংশ সময় তা বন্ধ থাকে।
যশোর মশিয়াহাটি গ্রামের কৃষক হরিনাথ বিশ্বাস বলেন, “দীর্ঘদিনের সমস্যায় ভুগছি আমরা গত দুই বছর কিছুটা বোরো আবাদ হলেও এ বার ধান হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছি না।”
ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সম্প্রতি ভবদহ অঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, “বিলগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয় আমডাঙ্গা খালের প্রবাহ বাড়াতে হবে। অন্যদিকে ভবদহ এলাকার হরি নদী, ভৈরব নদ ও মুক্তেশ্বরী নদীতে ড্রেজিং করে পানিপ্রবাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করেছি। দ্রুত সময়ে এ জলাবদ্ধতার সমাধান হবে।”
এ নিয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, “গত ২৫ নভেম্বর আমরা ভবদহের স্লুইস গেট খোলার উদ্দেশে গেলে সেখানে দেখি নদীর পানি জলাবদ্ধ থাকা পানির উপরে অবস্থান করছে। তবে নদী খনন কাজের মাধ্যমে ক্যানাল তৈরি হলে আমরা স্লুইস গেটের কপাট উঠিয়ে দিবো। তাহলে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারবে। এতে কৃষক ফসল চাষ করতে পারবে।
বাংলা৭১নিউজ/এসএন