টানা ২৪ দিন বন্ধ থাকার পর সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি-রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে। আমদানিকৃত পণ্য পরিমাপে অটো এসএমএস সফটওয়্যার পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে গত ৭ জানুয়ারি থেকে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। তবে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে অটো এসএমএস সফটওয়্যার পদ্ধতিতেই ওজন পরিমাপের মাধ্যমে আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তামাবিল স্থলবন্দরের পাথর, চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ছেদু।
তিনি জানান, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষামূলকভাবে অটো এসএমএস সফটওয়্যার পদ্ধতিতে (ডিজিটাল পদ্ধতি) আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা হলেও এই পদ্ধতিতে ধীরগতি ও ডাউকির সঙ্গে পণ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে ওজনে তারতম্যের কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে।
আগে ভারত থেকে আসা পণ্য সেখানকার ডাউকি স্থলবন্দরে ফিতা দিয়ে পরিমাপ করা হতো। তামাবিল বন্দরে প্রবেশের পর একই পদ্ধতিতে পরিমাপ করা হতো। গত ৭ জানুয়ারি থেকে তামাবিল স্থলবন্দরে অটোএসএমএস বা ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়। এই পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি হয়। তবে ভারতের পরিবেশ আদালতের আপত্তিতে কয়লা আমদানি অনেকদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। আর পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে পড়ায় ২৪ দিন ধরে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিলো এ বন্দর। এই ২৪ দিনে সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা জানান, সোমবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হয় তাদের। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অটো এসএমএস বা ডিজিটিাল পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে আমদানি শুরু করতে সম্মত হন তারা। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষামূলকভাবে অটোএসএমএস পদ্ধতিতে মঙ্গলবার থেকে ব্যবসায়ীরা আমাদানি কার্যক্রম শুরু করেন।
এই পদ্ধতিতে আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তামাবিল স্থলবন্দরে অবস্থান করছেন। তারা আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
এ বিষয়ে তামাবিল স্থলবন্দরের পাথর, চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ছেদু জানান, নতুন পদ্ধতিতে ডাউকির সঙ্গে পণ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে ওজনে তারতম্যের কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে।
আগের মতো পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাও চাই ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হোক। তবে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরের কাজ শেষ হওয়ার পর একসঙ্গে দুই দেশে তা চালু হলে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না আর সরকারও সঠিক রাজস্ব পাবে।
তামাবিল স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুধু বন্দর ট্যারিফ বাবদ প্রতিদিন সরকার ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা এবং রাজস্ব বাবদ আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে করে গত ২৪ দিনে সরকার প্রায় ১২ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বন্দর সচল থাকলেও ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছিলেন। এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতেই পুণরায় আমদানি শুরু করেছেন তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এমকে