রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বোমা ফাটিয়ে সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের মূলহোতাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ডাকাতদলের মূলহোতা ল্যাংড়া হাসান ওরফে হাসান জমাদ্দার (৩৪)। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করেন তিনি। মূলত তিনি ভারতে বসে সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন এলাকার সোনার দোকানে ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন। পরে দেশে এসে ডাকাতি শেষে আবারও ভারতে পালিয়ে যেতেন।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- ল্যাংড়া হাসানের সহযোগী মো. আরিফ (২৬), মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), মো. সাইফুল ইসলাম মন্টু (৪৫), মো. আনসার আলী (৫০) মো. শাহীন (৩৫)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, পাঁচটি চাপাতি ও ডাকাতি শেষে পালিয়ে যেতে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের ভালুকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছিল দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাতদল। দলের মূলহোতা ল্যাংড়া হাসান ভারতে বসে সহযোগীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার সোনার দোকান টার্গেট করতো। এরপর ডাকাতির আগে তারা সেই দোকানের আশপাশে একটি বাসা ভাড়া নিতো।
এরপর দলের সদস্যরা দোকানের আশপাশে রেকি করে প্রস্তুতি নিতো। সবকিছু ঠিক হলে হাসান ভারত থেকে এসে দলে যোগ দেয়। প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ছয় থেকে সাত মিনিটের মধ্যে দোকানের স্বর্ণালঙ্কার লুট করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়িতে পালিয়ে যেতো।
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, এই চক্রটি ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করে সে তথ্য আমরা পেয়েছি। আপনারা জানেন পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে কিছু চক্র রয়েছে যারা এসব মাল কিনে থাকেন। আমরা মালিক সমিতিকে অনুরোধ করবো এসব অসাধুচক্রকে প্রশ্রয় দেবেন না। তারা এসব মালামাল কেনার কারণেই দুর্ধর্ষ চক্র ডাকাতি করছে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। আমরা তাদেরও আইনের আওতায় আনবো।
ডাকাতদলের মূলহোতা ও মাস্টারমাইন্ড ন্যাংড়া হাসানের টার্গেট সোনার দোকান উল্লেখ করে গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে হাসান। সে ভারতে বসে পরিকল্পনা করে দেশে এসে ডাকাতি করতো। এরপর ডাকাতি করে পাওয়া মালামাল ভাগাভাগি শেষে আবারও ভারতে পালিয়ে যেতো। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে গুলি লাগে হাসানের। তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে।
ল্যাংড়া হাসান ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোন প্রক্রিয়ায় ভারতে যেতো জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ন্যাংড়া হাসানের ভারতে নাগরিক কার্ড করেছে। তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। তাই সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পালিয়ে যেতো। একইভাবে আবার ফিরে আসতো। সে ২০০৮ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে। তার আশ্রয়দাতাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। ভারতে সে কীভাবে নাগরিক হলো সে বিষয় আমরা লোক পাঠিয়ে খোঁজ করবো।
গ্রেফতার চক্রের সদস্যদের স্বীকারোক্তি উল্লেখ করে হারুন বলেন, চক্রটি হাসানের নেতৃত্বে সারাদেশে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতি করেছে। এই ডাকাতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভরি সোনা ছিনিয়ে নিয়েছে। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জ ডাকাতির পর ফেনীতে ডাকাতি করে। সেখানে ডাকাতির সময় একজনকে গুলি করে। সেই ব্যক্তি পরে মারা গেছেন। খিলগাঁও এলাকায় ডাকাতির ঘটনায় রামপুরা থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ