সাম্পান হচ্ছে চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী নৌযান। এক সময়ে কর্ণফুলী নদীতে সাম্পানের আধিক্য ও জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সাম্পানের সেই যুগ শেষ হয়েছে। সেই স্থানে দখল নিয়েছে ইঞ্জিনচালিত বোট। তবে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সাম্পানকে ভিন্ন মাত্রায় নান্দনিক সৌন্দর্যে কাপ্তাই হ্রদে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় সে আদলে তৈরি করা হয়েছে হাউজবোট। যেটি ‘স্বপ্নডিঙি’ নামে হ্রদের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের সেবা দিচ্ছে সাম্পানের আদলে গড়া ‘স্বপ্নডিঙি’ হাউজবোটটি। ঘরের আদলে তৈরি এই বোটে রয়েছে বিলাসবহুল কক্ষ। হ্রদে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি খাওয়া ও রাত্রিযাপন থেকে শুরু করে হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধা এই হাউজবোট থেকে পেয়ে থাকেন পর্যটকরা। রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রায় যোগ দেওয়া হাউজবোট এরইমধ্যে দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে। তার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী এই সাম্পানের আদলে গড়া হাউজবোট দৃষ্টি কাড়ছে পর্যটকদের।
এই সাম্পান বোটে রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে বিলাসবহুল কক্ষ, ছাদে রয়েছে আড্ডা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্থান। হ্রদের ওপর ভাসমান এই বোটে নিরাপদে রাত্রিযাপন করা যায়। বোটে প্রবেশ করলে বোঝার উপায় নেই এটি কাপ্তাই হ্রদে চলাচলকারী কোনো নৌকা নাকি বিলাসবহুল চলমান বাড়ি কিংবা কোনো আবাসিক হোটেল। সারাদিন হ্রদে ঘোরাঘুরি, নাশতা, লাঞ্চ ও ডিনারসহ রাত্রিযাপনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বেশ কিছু প্যাকেজ।
‘স্বপ্নডিঙি’ হাউজবোটে করে হ্রদের বুকে বেড়াতে আসা লুৎফুননেছা বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন রাঙ্গামাটিতে একসঙ্গে বেড়াতে এসেছি। কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দিগন্তবিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য অবলোকন করতে বেশ ভালোই লাগছে। হ্রদের বুকে হাউজবোটে করে পাহাড়ি জীবনযাত্রার দৃশ্য উপভোগ করতে করতে হারিয়ে যেতে পারছি নীরব-নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে। এত সুন্দর প্রকৃতি আর তার সঙ্গে এক জায়গায় সব সুযোগ-সুবিধা এবং রোমাঞ্চকর এই হাউজবোট বেশ ভালো লাগছে।
আরেক পর্যটক তানজিমুন নাহান বলেন, ইট-পাথরের শহর থেকে এসে যদি সেই ইট পাথরের হোটেলে থাকি তাহলে কেমন যেন লাগে। কিন্তু এই হাউজবোট যেন অন্যরকম এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করেছে। হ্রদের বুকে এক টুকরো বাড়ি, যেটাতে করে ভেসে বেড়ানো যায়, থাকা যায়, খাওয়া-দাওয়াসহ একটি হোটেলের সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়।
পর্যটক তৌফিক আহম্মেদ বলেন, হাউজবোটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, প্রকৃতি দেখছি, সবকিছুই অন্যরকম লাগছে। বোটটাই অনেক সুন্দর এবং সব কিছু পরিপাটি। খাবারও খুব সুস্বাদু, এককথায় অসাধারণ এই ‘স্বপ্নডিঙি’ হাউজবোট।
‘স্বপ্নডিঙি’ হাউজবোট ব্যবস্থাপক সতেজ দেওয়ান বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে আসেন। তারা এখানে আসলে হোটেলের রুম খুঁজতে হয় আবার হ্রদে বেড়ানোর জন্য বোট খুঁজতে হয়। এছাড়া পাহাড়ি খাবারদাবার খেতে চাইলেও তাদের সেরকম রেস্তোরাঁ খুঁজতে হয়। তাই বোট ও হোটেলের সব সেবা একত্রীকরণের পরিকল্পনা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া।
বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে সহসাই ‘স্বপ্নডিঙি-টু’ নামে আরও একটি নৌকা যুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এসএইচ