করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের। ফলে তাদের দেয়া হচ্ছে টিকা। ইতোমধ্যে যাদের টিকা দেয়া হয়েছে তাদের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে- এমন খবর পাননি চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে রাজধানীর চাঁনখারপুলের ৫০০ শয্যা শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের টিকা প্রদানকারী কমিটির ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আশরাফুল হক জানান, তাদের এ কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বর্তমানে গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদাত্রী মায়েরা পাচ্ছেন এসব টিকা। এ কেন্দ্রে সাতজন গর্ভবতী নারী ও পাঁচজন স্তন্যদাত্রী মাকে মডার্নার টিকা দেয়া হয়।
টিকা দেয়ার পর তাদের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিকা গ্রহণের পর তাদের বেশ কিছুটা সময় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ওই সময় ও পরবর্তীতে তাদের কারও বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এমনটা জানা যায়নি।
ডা. আশরাফুল হক জানান, তাদের এ কেন্দ্রে যারা ছয় মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতী নারী শুধু তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকা প্রদানের আগে তাদের কাউন্সেলিং করে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া স্তন্যদানকারী মা, যাদের শিশুর বয়স ছয় মাসের ওপর এবং মায়ের বুকের দুধ ছাড়াও অন্যান্য খাবার খাচ্ছে শুধু সে সব মাকে টিকা দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশে ৮ আগস্ট গর্ভবতী নারী ও স্তন্যদাকারী মায়েদের টিকা প্রদানের অনুমতি প্রদান করে সরকার। এরপর ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি হয়।
এতে বলা হয়, গর্ভবতী নারীদের ‘সুরক্ষা’ ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে শুধু হাসপাতালবিশিষ্ট সরকারি টিকাকেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া যাবে। এর আগে ওই নারীকে কাউন্সেলিং করবে কেন্দ্রের রেজিস্টার্ড চিকিৎসক।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, গর্ভবতী নারী অসুস্থ থাকলে তাকে টিকা দেয়া যাবে না। এছাড়া টিকা নিতে পারবেন না অনিয়ন্ত্রিত দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীরা। কোনো নারীর টিকার অ্যালার্জির পূর্ব ইতিহাস থাকলে তাকেও টিকা দেয়া যাবে না।
এছাড়া কোনো গর্ভবতী নারী যদি করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর এইএফআই কেস হিসেবে শনাক্ত হন তবে তাকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে না।
জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের জাতীয় ফোরাম অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গায়নিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) বেশ কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরে গর্ভবতী মা এবং যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের টিকার আওতায় আনার আবেদন করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এ বিষয়ে আলোচনায় বসে জাতীয় টিকা পরামর্শক কমিটি।
তিনি বলেন, টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখা হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ঝুঁকি’ আরেকটি ‘সুফল’। এক্ষেত্রে ঝুঁকির তুলনায় সুফল বেশি বলে তারা মনে করেন।
ডা. বে-নজির আহমেদ আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে গর্ভবতী মায়েরা টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে টিকার বিরূপ প্রতিক্রিয়াও মূল্যায়ন করা হয়েছে। গর্ভবতী নারীদের টিকা দেয়ার যে ঝুঁকি তা অন্যদের তুলনায় বেশি নয়। এজন্যই তাদের টিকা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলা৭১নিউজ/এবি