স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে নির্বাচন থেকে সরাতে আওয়ামী লীগ কোনো প্রকার চাপ দিতে চায় না, এ কথা জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এতে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হবে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সোমবার রাতে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতির বৈঠকের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘স্বতন্ত্র তো স্বতন্ত্রের জায়গায় আছে। আমি যদি এখন কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে চাপ দিয়ে সরে দাঁড়াতে বলি, তাহলে কি সেটা নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ হবে না?’
১৪ দলীয় জোটের বেশি আসন চাওয়া কতটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অযৌক্তিক বলে কিছু নেই। তারা দাবি করতেই পারে। তারা জোট করে, তারা দল করে, দলের কাছে তো তাদের মর্যাদার একটা ব্যাপার আছে। তারা বিভিন্ন দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা তো চাইতে পারে। কিন্তু, এখানে অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে। একজনকে আমরা দিলাম, কিন্তু সে নট ইলেক্টেবল, সেই অবস্থায় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। সেখানে অন্য কেউ বেরিয়ে আসতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এক দলকে ৪০টার দিয়ে দেওয়া যায়, দিলে কী হবে? আমরা খুব সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে কথা বলেছি। একটা বিষয় লক্ষণীয়—রাজনৈতিক আলোচনাটাই বেশি হয়েছে। সিট মিট সাইডলাইনে কথা হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে৷ প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভিউজ, কী করণীয়, এ নিয়ে আলোচনা করেছেন।’
আসন ভাগাভাগির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমু ভাই আছেন, উনি কো-অর্ডিনেট করছেন।’
বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটের সভাপতির (শেখ হাসিনা) কথা তারা শুনতে আগ্রহী ছিলেন। তার কাছ থেকে তাদের অনেক জাতীয়, আন্তর্জাতিক, ভূ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জানারও আগ্রহ ছিল। জোটের চেয়ারম্যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী কী ভাবছেন? বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের শক্তিরও খেলা আছে। নিশ্চয়ই এখানে প্রত্যেকেরই একটা স্বার্থ আছে।
এখানে বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর মধ্যেই একটা কো-অর্ডিনেশন আছে৷ সময়ে সময়ে আলাপ-আলোচনা করে এটাকে ব্যালেন্স একটা নীতি গ্রহণ করার বিষয়ে তারা ঐক্যমত পোষণ করেন। নেত্রী এখানে বাংলাদেশকে নিয়ে বাইরের স্বার্থ্যের যে খেলা বহুদিন আগে থেকে আছে, এ দেশে পঁচাত্তর ঘটে গেছে, ৩ নভেম্বর ঘটেছে। বারবার তো হামলা আসে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের মূল কথা হচ্ছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সে ব্যাপারে আমরা সবাই একমত।’
কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এটা কি নতুন কোনো দৃষ্টান্ত? এটা তো প্রায় নির্বাচনেই হয়। তাতে কি ক্ষতি হবে? প্রার্থিতা যদি যৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশন বাতিল করে, তাহলে আমরা কোনো অজুহাত, আপত্তি করতে যাবো না। শূন্য এবার কোথাও থাকবে না।’
নির্বাচনে দলের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে সফট স্টাইল, ফ্রি স্টাইলের বিষয় না। এটা আমাদের ইলেকশন স্ট্র্যাটেজি। আমাদের চেয়ারম্যান ওপেনলি বলে দিয়েছেন।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের কথা হচ্ছে। আলোচনা চলছে৷ কথাবার্তা বলেই তো সমাধান করতে হবে।’
বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৪ দলের নেতারা সন্তুষ্ট কি না, এ তথ্য নেওয়ার দায়িত্ব সাংবাদিকদের। আমাদের মধ্যে ঐক্যের কোনো ঘাটতি নেই। উই আর হ্যাপি।’
নির্বাচন একতরফা হচ্ছে, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একতরফা নির্বাচন যারা বলে, তারা একতরফা বাধা দিচ্ছে। এটা একতরফা নির্বাচন নয়। যারা একতরফা বাধা দিচ্ছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।’
দলীয় প্রার্থী ও দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়া ব্যক্তিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। একে অন্যকে বাধা দেওয়ার ঘটনাও আছে৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্টির লোক হোক, যে-ই হোক, কেউ বাধা দিতে পারবে না।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলা৭১নিউজ/এসএকে