‘এই শিতের রাইতত ঠিক মতন নিন্দাবা পারু না। সারাদিন ভিক্ষা করে রাইতত জারের তানে নিন্দ ধরে না। আইজ স্যার আসে একটা কম্বল দিল। এলা রাইতত শান্তিতে নিন্দাবা পারিম।’ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কম্বল পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানালেন মোবারক (৫৫)।
শনিবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত অসহায় মানুষকে প্রায় ২শ কম্বল বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান ও তার পরিবার।
শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মার্কেটের নিচে ঠান্ডায় জড়োসড়ো হয়ে ঘুমিয়ে থাকা মোবারককে ডেকে কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। মোবারক তখন আবেগে এসব কথা বলেন। সারাদিন ভিক্ষা করে খাওয়ার ব্যাবস্থা হলেও রাতে ঘুমান মার্কেটের নিচে। ঠান্ডায় কোনো কম্বল না থাকায় একটি ছেঁড়া বস্তা গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। কম্বলটি পেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন এবং দোয়া করেন।
এ সময় বাসস্ট্যান্ড এলাকার রিকশাচালক মোখলেসুরকেও কম্বল দেন জেলা প্রশাসক। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন রিকশা চালাই। সরকারের পক্ষ থেকে শীতে কম্বল দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে কম্বল নেওয়া সম্ভব হয় না। আজ হঠাৎ স্যার এভাবে কম্বল দেবেন কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।
আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় শীতে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা এক বৃদ্ধকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে কম্বল দেন জেলা প্রশাসকের স্ত্রী।
বৃদ্ধ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার পর দু’হাত তুলে দোয়া করেন। বৃদ্ধ বলেন, ‘মোর বেটি অসুস্থ। হসপিটালত ভর্তি করাইছু। ওইঠে মোক থাকিবা দেয় না ওইতানে বাহিরত বসে আছু। কাপড়ও আনু নাই ওইতানে ঠান্ডায় কাপেছিনু। কুন্ঠে থেকে যে মাইগেনা আসে মোক কম্বল দিল মুই তো বুঝিবার পারিনু নাই। আল্লাহর ওমাহর ভালো করিবে।’
এর আগে জেলা প্রশাসক ও তার পরিবার শহরের কালিবাড়ি এলাকার হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িতে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেন। এছাড়াও শহরের রেল স্টেশন, রোড এলাকা, হাসপাতাল, চৌরাস্তাসহ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা অসহায় শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।
জেলা প্রশাসকের স্ত্রীর কাছে এমন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। আমার ছোট দুই সন্তানকেও নিয়ে বের হয়েছি। তাদেরও শেখা উচিৎ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। আর আমার নিজের অনেক ভালো লাগছে এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের প্রকোপ অনেক বেশি। আর প্রশাসন মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য এই উদ্যোগ। সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে এই শীতে অনেক অসহায় মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
বাংলা৭১নিউজ/পিকে